কলকাতার বুকে বাণিজ্য সম্মেলনের প্রস্তুতি, লক্ষ্য উদ্যোগপতিদের বাস্তুতন্ত্র নির্মাণ

ছোটো স্টার্টআপ, এমএসএমই থেকে শুরু করে তাবড় এন্টারপ্রাইজ, একাডেমিয়া, ইউনিকর্ন— হাজির থাকবে সকলেই। এক ছাদের নিচে জড়ো হবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছোটো-বড়ো উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক, শিক্ষাবিদ, বিনিয়োগপতি, ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব এবং সরকারি আধিকারিকরা। সবমিলিয়ে বলতে গেলে এ যেন এক সব-পাই-এর দুনিয়া। ‘বেস্ট’ (BEST)— বেঙ্গল এন্টারপ্রেনিয়স সামিট অন টেকনোলজি (Bengal Entrepreneur's Summit On Technology)। আর কয়েকদিনের অপেক্ষা মাত্র। তারপর এই আশ্চর্য ‘সম্মেলন’ আয়োজিত হতে চলেছে এই বাংলার বুকেই।

২০২০-এর শুরুতেই ভারতের বুকে থাবা বসিয়েছিল করোনা মহামারী। কাজ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। বন্ধ হয়েছিল বিভিন্ন কল-কারখানা। তবে থেমে থাকেনি বাংলার অর্থনীতি। বরং, পূর্ব-ভারতের অন্যতম অর্থনৈতিক স্তম্ভ হয়ে উঠেছিল বাংলা। মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল অসংখ্য ছোটো-বড়ো স্টার্টআপ। বিশেষত প্রযুক্তির দুনিয়ায় দেশকে একের পর এক আশ্চর্য উদ্ভাবনী উপহার দিয়েছে বাংলার তরুণ উদ্যোগপতিরা। বলতে গেলে ‘বেস্ট’ তাঁদের এই সাফল্যেরই উদযাপন। বাংলার বুকে প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যের ইকোসিস্টেম গড়ে তোলাই তার উদ্দেশ্য। 

আগামী ১৯ জানুয়ারি কলকাতার স্মার্ট কানেক্টে বসতে চলেছে এই বাণিজ্যিক আসর। আর এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছে জাতীয় অলাভজনক সংস্থা ‘ন্যাসকম’ (NASSCOM)— ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিস কোম্পানিস। আশির দশকের শেষ থেকে শুরু হয়েছিল ন্যাসকমের পথ চলা। দেশের বিভিন্নপ্রান্তের ছোটো-বড়ো সংস্থাকে এক ছাতার তলায় আনাই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। সবমিলিয়ে দেশের ৩ হাজারেরও বেশি প্রযুক্তি সংস্থা আজ এই সংগঠনের অংশ। কাজেই আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না, ভারতের জিডিপি অর্থাৎ মোট আয়ে এই সংস্থার অবদান ঠিক কতটা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আইটি বিপিএম-এর ক্ষেত্রে ন্যাসকম-এর সদস্য সংস্থাদের মোট বার্ষিক আয় ২২৭ বিলিয়ন ডলারের। 

তবে এখানেই থেমে নেই ন্যাসকম। ভারতীয় প্রযুক্তির এই বাণিজ্যিক ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় অলাভজনক সংস্থাটি। আর তার অন্যতম উদাহরণ ‘বেস্ট’। বাংলা তো বটেই, ন্যাসকমের এই সাম্প্রতিক উদ্যোগ গোটা ভারতের অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির পরিকাঠামোকে সার্বিকভাবে বদলে ফেলবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। স্থানীয় উদ্যোক্তা এবং স্টার্টআপদের দেবে তাঁদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রদর্শনীর মঞ্চ, বিনিয়োগকারী খুঁজে নেওয়ার সুযোগ। বলতে গেলে এই টেকনোলজিক্যাল ইকোসিস্টেম একদিকে যেমন বাণিজ্যিক সমন্বয় ঘটাবে বাংলার সঙ্গে অন্যান্য রাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাদের, তেমনই পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে বাড়তে থাকা বেকারত্বকেও। 

প্রাচীন কাল থেকেই ভারতের বাণিজ্য, উদ্যোগ এবং ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাংলা। ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখলেই হদিশ পাওয়া যাবে সেই স্বর্ণযুগের। বাংলার সেই গৌরবকেই আবার ফিরে আনার চেষ্টা করছে ‘বেস্ট’। সেদিক থেকে, এই বাণিজ্যিক সম্মেলনকে ‘গেমচেঞ্জার’-র বললেও ভুল হয় না এতটুকু…

Powered by Froala Editor