হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে চলেছে তার একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। অথচ পৃথিবী থেকে চাঁদের একটি পৃষ্ঠই শুধু দেখতে পাওয়া যায়। চাঁদের আহ্নিক গতি এবং বার্ষিক গতি সমান হওয়ার জন্যই এমন ঘটনা ঘটে। ফলে চাঁদেরও কেবল একটি দিক থেকেই পৃথিবীকে দেখা যায়। পৃথিবীর আলো তো বটেই, মানুষের প্রেক্ষিপ্ত নানা রেডিও তরঙ্গও তার এই একটি পৃষ্ঠেই আছড়ে পড়ে। আর অপর প্রান্তে থাকে এক অদ্ভুত নীরবতা। মানুষের কোনো কোলাহল সেখানে পৌঁছতে পারে না।
তবে এমন স্বর্গীয় নীরবতাকে কি গবেষণার কাজে লাগানো যায় না? নাসার গবেষণাগারে বসে এই চিন্তাই করছিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়। ভেবেছেন চাঁদের ওই দূরতম পৃষ্ঠে রেডিও টেলিস্কোপ তৈরির কথা। এর ফলে অনেক সহজে নতুন নতুন তথ্য জানা সম্ভব হবে বলেই মনে করছেন তিনি। প্রথমত, মানুষের তৈরি কোনো বেতার সংকেত সেখানে পৌঁছয় না। অতএব কেবলমাত্র একটি রাডারের মাধ্যমেই মহাকাশের অনেক তথ্য সন্ধান করা সম্ভব হবে। সেখানে ভুলত্রুটির সম্ভবনা প্রায় থাকবে না বললেই চলে। দ্বিতীয়ত, আমরা সবাই জানি চাঁদের কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। অতএব বায়ুমণ্ডলে প্রতিফলিত হয়ে কোনো রেডিও তরঙ্গ মহাকাশে ফিরে যাবে না। ফলে দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দুর্বল রেডিও সংকেতও ধরা পড়বে এই টেলিস্কোপে।
সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গবেষণা প্রাথমিকভাবে নাসা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়েছে। একটি বিজ্ঞপ্তিতে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষার কাজ শুরু করতে পারেন তিনি। আর সেইজন্য ১ লক্ষ ২৫ হাজার ডলার অর্থও বরাদ্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। নাসা কর্তৃপক্ষের এই অনুমোদন পেয়ে খুশি বাঙালি বিজ্ঞানীও। তবে আপাতত তাঁর গবেষণা পুরোটাই একটা সম্ভবনার স্তরে আছে বলে মনে করছেন তিনি। চাঁদের দূরতম পৃষ্ঠ, যে অঞ্চল সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা এখনও প্রায় অন্ধকারেই আছেন, সেখানে এমন একটা পর্যবেক্ষণকেন্দ্র গড়ে তুলতে গেলে আরও পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।
অন্যদিকে, নাসা কর্তৃপক্ষও এই গবেষণার বিষয়ে আশাবাদী। তাঁরা জানিয়েছেন, সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়ের গবেষণা সফল হলে চাঁদের বুকেই তৈরি হবে সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড় রেডিও অবজার্ভেটরি। যার ব্যাস হবে এক কিলোমিটার। যা এখনও অবধি চিনে অবস্থিত বৃহত্তম রেডিও অবজার্ভেটরির আয়তনের দ্বিগুণ। এমনকি, নাসার সবচেয়ে উন্নত রোভার যান ডু-অ্যাক্সেলকেও এই কাজে ব্যবহার করতে তাঁরা প্রস্তুত বলে জানা গিয়েছে।
গত বিজ্ঞপ্তিতে এমনই এক ডজন দূরদর্শী প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে নাসা প্রকল্প। শুরু হয়েছে গবেষণার কাজও। এখন কবে প্রস্তুতির কাজ শেষ হবে, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই। এতদিন রাতের অন্ধকারে সূর্যের আলোকে পৃথিবীর বুকে পৌঁছে দিয়েছে চাঁদ। এখন কি সারা ব্রহ্মাণ্ডের সামনে পৃথিবীর বৃহত্তম চোখ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে এই উপগ্রহটি?