পরিবেশ দূষণ তো রয়েইছে। সেইসঙ্গে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে জীবাশ্ম জ্বালানির ভাণ্ডার। আর সেই কথা ভেবেই ক্রমশ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির দিকেই ঝুঁকছে মানব সভ্যতা। কিন্তু গোটা পৃথিবীর বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এখনও অপ্রতুল বায়ুশক্তি, সৌরশক্তি কিংবা জলবিদ্যুৎ-এর পরিকাঠামো। তবে বায়ুমণ্ডলের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিকল্প পথ। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় অফুরন্ত বৈদ্যুতিক শক্তির প্রবাহ হয়ে চলেছে অনবরত। প্রাকৃতিক সেই শক্তিকেই এবার নাগালে আনতে অভিযান চালাচ্ছে নাসার।
কিন্তু কীভাবে শক্তির উৎস হয়ে উঠছে বায়ুমণ্ডল? বায়ুমণ্ডলের গঠনের দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে বিষয়টা। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে বিস্তৃত রয়েছে বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর তথা আয়নোস্ফিয়ার। আর তার নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রহস্য। হ্যাঁ, সূর্যের কসমিক বিকিরণ এসে আঘাত করে এই স্তরটিকেই। সেই বিকিরণের কারণেই বায়ুর পরমাণু থেকে নির্গত হয় উচ্চশক্তি সম্পন্ন ইলেকট্রন। ফলত, সামগ্রিকভাবে আয়নিত হয়ে যায় আয়নোস্ফিয়ারে অবস্থিত বায়ুর স্তর। আর পৃথিবীর মহাকর্ষ বল, আবর্তন গতি এবং তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ক্রমশ প্রবাহিত হতে থাকে এই আয়নিত কণাগুলি। তৈরি করে বিদ্যুৎপ্রবাহ। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ঘটনাটিকে বলা হয় বায়ুমণ্ডলীয় ডায়নামো।
১৯২৭ সালে প্রথম আয়নোস্ফিয়ারের রহস্য সমাধান করেন পদার্থবিদ এডওয়ার্ড অ্যাপেলটন। বায়ুমণ্ডলীয় ডায়নামোর ধারণা আসে বিশ শতকের একেবারে শেষের দিকে। কিন্তু শক্তির উৎস থাকলেই তো হবে না। তাকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলাই তো সবথেকে বড়ো চ্যালেঞ্জ। আর তা নিয়েই দীর্ঘ দু’দশক ধরে চলছে গবেষণা। ২০১৩ সালে এই প্রাকৃতিক ডায়নামোর কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করতে যৌথ উদ্যোগে বিশেষ যাত্রীহীন মহাকাশযান পাঠিয়েছিল নাসা এবং জাপানের মহাকাশ সংস্থা। তাতে কর্মক্ষমতার হদিশ মিলেছিল ঠিকই কিন্তু বিপুল এই শক্তিপ্রবাহে মাত্র ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল সেই মহাকাশযান। বলা যায় একপ্রকার ব্যর্থই হয়েছিল মিশন ডায়নামো।
তবে থেমে থাকেনি গবেষণা। বিজ্ঞান এগিয়ে চলেছে নিজের গতিতেই। এবার আয়নোস্ফিয়ারের সেই জটিল ধাঁধাঁ সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই দাবি করছেন নাসার গবেষকরা। এমনকি তাঁদের দেওয়া তত্ত্বকে স্বীকৃতি জানিয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সংগঠনও। সম্প্রতি দ্বিতীয় ডায়নামো মিশনের কথা ঘোষণা করল নাসা। কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় আয়নোস্ফিয়ারে পাড়ি জমাতে চলেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থাটি।
আরও পড়ুন
৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় হিসাবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পুরস্কার বঙ্গতনয়ার
আয়নোস্ফিয়ারে বিদ্যুৎ প্রবাহকে ব্যবহার করতে মূলত দুটি মহাকাশযান পাঠাচ্ছে নাসা। মূলত বলয়াকার বায়ুপ্রবাহের দ্বিমুখী গতিকে আয়ত্ত করতেই এমন ব্যবস্থা। আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি মহাকাশযান পাড়ি দেবে পৃথিবী থেকে। আর সেই পাইলট অভিযান সফল হলে মানব সভ্যতার হাতে চলে আসবে ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। চিরতরে মিটবে গোটা বিশ্বের শক্তির চাহিদা। তবে এত কিছুর পরেও সংশয় রয়েছেই। এখন দেখার, তত্ত্বের পাশাপাশি বাস্তব পরীক্ষায় চূড়ান্ত সাফল্য মেলে কিনা গবেষকদের…
আরও পড়ুন
১০০ বছরের জন্য উল্কা-হানা থেকে নিরাপদ পৃথিবী : নাসা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মঙ্গলে সংরক্ষিত রয়েছে ৩০-৯৯ শতাংশ জল, জানাল নাসার সাম্প্রতিক গবেষণা