গত মাসে ৭ তারিখ। এখনো দগদগে ক্ষত হয়ে রয়েছে উত্তরাখণ্ডের বুকে। ঋষিগঙ্গার উপত্যকা নেমে আসা বিধ্বংসী সেই ধ্বসের ক্ষত আজও পুরোপুরি সারিয়ে উঠতে পারেনি একাধিক গ্রাম। বরফ, পাথর আর পলিতে চাপা পড়ে গিয়েছিল আসত দুট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু হঠাৎ কেন নেমে এসেছিল এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ? নাসার আর্থ অবজারভেটরির নতুন উপগ্রহ চিত্র থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল তার কারণ।
নাসার স্যাটালাইট চিত্রে ফুটে উঠল, বিপর্যয়ের মাস কয়েক আগে থেকেই ফাটল দেখা দিয়েছিল ৬ হাজার মিটার উচ্চ রন্টি পর্বতের বরফাবৃত শিখরে। ৭ ফেব্রুয়ারি সেখান থেকেই বিশাল একটি বরফের চাঁই খসে পড়ে। তারপর ঝুলন্ত হিমবাহে এসে আঘাত করলে হিমবাহটি রিজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্রুত নেমে আসে তলায়। প্রায় দু-কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর স্থবির হয়েছিল হিমবাহের অংশটি। তবে পতনকালে শিলার ঘর্ষণে জলস্রোত এবং পলির সঙ্গেই নেমে আসে পাথরের টুকরো এবং বরফ। উপত্যকায় আঘাতে ফলে সৃষ্টি হয় ধুলোমেঘ। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর করে তুলতে যা সময় নেয়নি খুব বেশি।
নাসার ল্যান্ডস্যাট-৮ এর অপারেশনাল ল্যান্ড ইমেজার উপর থেকে ভৌগোলিক এবং ভূ-তাত্ত্বিক বর্ণময় ছবি সংগ্রহ করেছিল। সেই রগড টপোগ্রাফি চিত্রটির বিশ্লেষণ করতেই উঠে এল ঘটনার সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। রন্টি পর্বতের শিখরে কীভাবে ধরল এই ফাটল? ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক ড্যান শুগার এই প্রশ্নের উত্তরে তুলে এনেছেন বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার কথা। তার মধ্যে যেমন রয়েছে আবহাওয়া পরিবর্তন, তেমনই রয়েছে পৃথিবীর টেকটোনিক পাতের গতিও। প্রাসঙ্গিকতার প্রেক্ষিতে আলাদা আলাদা মডেলগুলিকে বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন তিনি।
তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, উত্তরাখণ্ডের এই দুর্গম অঞ্চলে কোনো আবহাওয়া কেন্দ্র নেই। যার ফলে আসল কারণ চিহ্নিত করা আরও শক্ত হয়ে উঠেছে পরিবেশবিদদের কাছে। যদি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই এই ঘটনা হয়ে থাকে তবে পারমাফ্রস্টের জলাবদ্ধ শৈলী অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে। অন্যদিকে যদি এর কারণ টেকটোনিক পাতের নড়াচড়া হয়, তবে আগামীদিনে আবারও নেমে আসতে পারে একই ধরণের বিপর্যয়। দ্রুততার সঙ্গে এর কারণ খুঁজতে হবে বলেই সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা…
আরও পড়ুন
অলকানন্দা নদীতে অদ্ভুত আচরণ, উত্তরাখণ্ড-বিপর্যয়ের পূর্বাভাস পেয়েছিল মাছেরা?
Powered by Froala Editor