ভারতের মিষ্টি জলের মাছেদের মধ্যে অন্যতম সুস্বাদু মাছ মহাশোল। যা হিন্দিবলয়ে মহাশীর নামেও পরিচিত। বৃহৎ আকার এবং সৌন্দর্যের জন্য এই মাছকে ‘নদীর রানি’। এক সময় ভারতে প্রাপ্ত মহাশোল প্রজাতির মাছের প্রায় ৩০ শতাংশেরই বাসস্থান ছিল নর্মদা নদী। অথচ, বর্তমানে সেখানে তাদের দেখা পাওয়াও দুষ্কর। বিগত ৫ দশকে নর্মদায় মহাশোলের জনসংখ্যা কমেছে প্রায় ৭৬ শতাংশ। এমনকি বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় এই প্রজাতিটিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে মধ্যপ্রদেশ বাওডাইভার্সিটি বোর্ড।
ভাবছেন দূষণ কিংবা অত্যাধিক মৎস্য শিকারের কারণে হয়তো বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে এই মাছ। না, ব্যাপারটা তেমন নয় একেবারেই। বরং আসল কারণ শুনলে একটু অবাকই হবেন। বছরের পর বছর ধরে অনিয়ন্ত্রিত বালি খাদানের (Sand Mining) জন্য ক্রমশ নর্মদার (Narmada) বুক থেকে মুছে যাচ্ছে মহাশোল।
মহাশোল সাধারণ স্বচ্ছ জলের মাছ। পাশাপাশি তার বৃদ্ধি এবং প্রজননের জন্য প্রয়োজন হয় মৃদু জলস্রোতের। ক্রমাগত অবৈধ বালি খাদানের ফলে ভাঙনের শিকার হচ্ছে নদী তীরবর্তী অঞ্চল। ঘোলা হয়ে উঠছে নর্মদার জল। ফলে, অস্বচ্ছ জলে প্রজনন ঘটাতে পারছে না এই বিশেষ মাছ। সেইসঙ্গে মধ্যপ্রদেশজুড়ে একাধিক বাঁধ তৈরির কারণে নর্মদার স্রোতও কমেছে অনেকটাই। প্রাণীবিজ্ঞানী ও সংরক্ষণকর্মী শ্রীপর্ণা সাক্সেনা জানাচ্ছেন এমনটাই।
তবে শুধু মহাশোলই নয়, এই একই কারণে নর্মদার বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একাধিক মৎস্য প্রজাতি। সবমিলিয়ে প্রায় ৬৪ ধরনের মাছের বসবাস নর্মদা নদীতে। যাদের মধ্যে গুরমাছ, ঘোঘারা, কামাঙ্কর-সহ বেশ কয়েকটি নেটিভ মাছের প্রজাতি এখন আর প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। মাছের সংখ্যা কমায় সারস ও অন্যান্য পাখীদের আনাগোনা কমেছে নর্মদার চরে। তাছাড়াও কমেছে একাধিক মিষ্টি জলের কাছিমের প্রজাতির সংখ্যা। সবমিলিয়ে অবৈধ বালি খাদানের জন্য প্রভাবিত হচ্ছে নর্মদার সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র।
২০১৫ সালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সমাধান পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন কমিটি। নর্মদায় অবৈধ বালিখনন নিষিদ্ধ করেছিল জব্বলপুর হাইকোর্ট। কিন্তু ছ’বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সেইভাবে সতর্ক হয়নি প্রশাসন। খাতায়কলমে আইন থাকলেও, বেশ সমারোহেই চলছে অবৈধ কার্যকলাপ। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যেই সম্পূর্ণ প্রাণহীন হয়ে পড়তে পারে নর্মদা, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এর শেষ কোথায়, তা জানা নেই কারোরই…
Powered by Froala Editor