ডিজিটাল নিরাপত্তার দিশা দেখিয়ে ‘গণিতের নোবেল’ লাজলো-অ্যাভির

কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ব্যবহার করি আমরা সকলেই। আর এই ডিজিটাল গ্যাজেটগুলির লক নির্মাণ হয় দুটি মৌলিক সংখ্যার উপরে ভর করেই। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। খুব বড়ো ইচ্ছামতো দুটি মৌলিক সংখ্যার গুণ ফলকেই লক হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। স্বাভাবিক নিয়মে সেই সংখ্যা দুটি নির্ণয় করতেই অনেক বেশি সময় লেগে যায় কম্পিউটারের। ফলে সেই লক সহজে ভেঙে ফেলা যায় না। তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কাছে এই লক ভেঙে ফেলা নিতান্তই ছেলেমানুষি কাজ। তবে কীভাবে সুরক্ষা প্রদান করা যাবে ব্যবহারকারীদের?

এমনই কঠিন একটি সমস্যার সমাধান দিয়েই এই বছর গণিতের ‘নোবেল’ অর্থাৎ অ্যাবেল পুরস্কার পেলেন হাঙ্গেরির গণিতবিদ লাজলো লোভাজ এবং ইউজারায়েলের কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যাভি উইগডারসন। গতকালই নরওয়ে অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এন্ড লেটারসের তরফে প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের এই দুই অ্যাবেল পুরস্কারবিজয়ীর নাম। দুই বিজ্ঞানীর মধ্যেই সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে ৭৫ লক্ষ নরোয়েজিয়ান ক্রোনারের অর্থপুরস্কার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬.৪২ কোটি টাকা)।

হাঙ্গেরির বুডাপেস্টের এটভিস লোর্যা ণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যাপনা করেন লোভাজ। অন্যদিকে ইজরায়েলি গবেষক উইগডারসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্স স্টাডির গবেষক। দু’জন ভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ, অথচ যৌথ প্রচেষ্টায় কঠিনতম একটি সমাধান সমাধান দিলেন তাঁরা। 

বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে, গণিতের কমপ্লেক্স থিওরি এবং ডিসক্রিট ম্যাথামেটিক্সের ওপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে এই গোটা গবেষণা। আর এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই নির্ণীত হয় অ্যালগরিদমের কার্যকারিতা এবং গণনার গতি। এর আগেও কমপ্লেক্সিটি থিওরির মাধ্যমে কঠিন সমস্যা সমাধানের পথ দেখিয়েছিলেন উইগডারসন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় তাঁর প্রধান অবদান রয়েছে ‘জিরো-নলেজ প্রুফ’-এ। এটি এমনই একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে কোনোরকম তথ্যের সরবরাহ না করেই যাচাই করা সম্ভব কোনো গাণিতিক বিবৃতির।

আরও পড়ুন
মঙ্গলে সংরক্ষিত রয়েছে ৩০-৯৯ শতাংশ জল, জানাল নাসার সাম্প্রতিক গবেষণা

আর এই পরিকাঠামো গঠনের জন্যই আবশ্যিক ছিল সংখ্যা তত্ত্বের প্রয়োগ। ডিসক্রিট ম্যাথামেটিক্স বা বিচ্ছিন্ন গণিতের। কেন না, বিশেষ কিছু সংখ্যার মাধ্যমেই সম্ভব এই অ্যালগোরিদম গঠন। সেই বিশেষ সংখ্যাচয়নের প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এবার থেকে করা যাবে এনস্ক্রিপশন। অনেক বেশি নিরাপত্তা পাবেন কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা। তথ্য অর্থনীতি, বিট কয়েনের মতো ডিজিটাল কারেন্সি কিংবা ব্যক্তিগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি কাজ করছে অত্যন্ত কার্যকরীভাবেই। পাশাপাশি মহাবিশ্বের রহস্য সমাধানেও কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ব্যবহৃত হতে পারে এই প্রযুক্তি। এককথায়, কম্পিউটার আর গণিতের এই গাঁটছড়াই নতুন যুগের দিকে নিয়ে যাবে বর্তমান সময়কে। আর সেই পথটাই দেখিয়েছেন অ্যাবেলজয়ী গবেষকদ্বয়…

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আবিষ্কৃত চারটি নতুন কণা, বদলাবে পদার্থবিদ্যার তত্ত্বও