লকডাউনে সবাই বাড়িতে বসে আছেন। কখনও অফিসের কাজ করা, আর সেসব না থাকলে বই পড়ে, শুয়ে কাটিয়ে দেওয়া। অনেকেই রীতিমতো বিরক্ত হচ্ছেন; আর এই ‘বোরিং জীবন’ কাটানো যাচ্ছে না! নৈনিতালের এই গ্রামবাসীদের ‘বোর’ লাগছিল কিনা জানা নেই। কিন্তু এই লকডাউনের বাজারে নিজেরাই নেমে পড়লেন মাঠে। সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে হাত লাগালেন। কী কাজ? গ্রামের রাস্তা ঠিকঠাক করা। মাত্র এক মাসেই তাঁরা তিন কিলোমিটার রাস্তা সারিয়েছেন!
নৈনিতালের এক ছোট্ট গ্রাম খারকি। সব মিলিয়ে ৪০টি পরিবারের বসবাস। গ্রাম থেকে যাতে অন্যত্র যাতায়াতের কোনো অসুবিধা না হয়, তার জন্য একটি রাস্তা আগেই তৈরি করেছিল প্রশাসন। তাও বছর দশেক আগের কথা। এবার পাহাড়ি এলাকা; কখনও বড়ো ধস, কখনও ফাটল— প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলতেই থাকে। শিলাউতির দিকে যাওয়ার এই তিন কিলোমিটার লম্বা রাস্তাটিও ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করল। প্রশাসনকে বারবার বলা হলেও কোনো হেলদোল নেই। এদিকে রাস্তার অবস্থাও দিনকে দিন খারাপ হতে থাকে। অন্য কোনো রুট না থাকায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই এখান দিয়ে যাতায়াত করতে থাকে মানুষ।
তবে ধৈর্যেরও শেষ থাকে। কতদিন আর এমনভাবে চলা যায়! যদি সরকার না করে, গ্রামবাসীরাই ঠিক করবে নিজেদের সমস্যা। কিন্তু সময় কোথায়? লকডাউন সেই অবসর নিয়ে এল। হাতে অফুরন্ত সময়, হাতের সামনে যা যন্ত্রপাতি আছে তাই নিয়েই নেমে পড়া মাঠে। ছোটো ছোটো টিম করে ২৫ জন গ্রামবাসী মিলে রাস্তা ঠিক করতে লেগে গেলেন। অবশ্যই স্যানিটাইজার, মাস্ক সবকিছু ব্যবহার করে। সোশ্যাল ডিসটেনসিংও মেনেছিলেন তাঁরা। করোনা ছাড়াও বন্য পশুর ভয়ও আছে। সব সামলে, মাত্র এক মাসের মধ্যেই তিন কিমি রাস্তা আবার তৈরি করে ফেললেন তাঁরা। লকডাউনকে একঘেয়ে করে তোলার বদলে, কাজের মধ্যে দিয়েই সময়ের সদ্ব্যবহার করলেন নৈনিতালের খারকি গ্রামের বাসিন্দারা।