গুপ্ত-পরবর্তী যুগে পূর্ব ভারতে যেসব ছোটো রাজ্য গড়ে উঠেছিল, তার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ছিল ছোটোনাগপুর অঞ্চলের নাগবংশীয় (Nagavanshi) রাজ্য। সুলতান আমলেও তার সার্বভৌমত্ব কোথাও এতটুকু ক্ষুণ্ণ হয়নি। এমনকি মোঘল শাসকদের বশ্যতা স্বীকার করলেও তার অস্তিত্ব পুরোপুরি মুছে যায়নি। অথচ এমন একটা রাজত্ব সম্পর্কে ইতিহাসে খুব কম তথ্যই জানা যায়। জনশ্রুতি বলে নাগ রাজাদের ছিল রত্ন সংগ্রহের শখ। বিশেষ করে হিরের সম্বন্ধে ছিল মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ। পরবর্তীকালে তার কিছু মোঘলরা নিয়ে গিয়েছেন, কিছু চুরি করেছেন ইংরেজ শাসকরা। বাকি আর কিছু ছিল কিনা, এতদিন জানা যায়নি। তবে এবার সেইসব তথ্য সংগ্রহের একটা পথ খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলায় নবরত্নগড় অঞ্চলে খননকার্য চালিয়ে এক ভূগর্ভস্থ প্রাসাদের (Underground Palace) সন্ধান পেলেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার গবেষকরা। ২০০৯ সাল থেকেই সংরক্ষিত ঐতিহাসিক অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে নবরত্নগড়। তবে তার পরেও গবেষণার কাজ খুব বেশি এগোয়নি। ২০২০ সালে নতুন করে খননকার্য শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোভিড অতিমারীতে সেই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি শুরু হয়েছে খননকার্য। মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে সেই কাজ। এর মধ্যেই মাত্র মাসখানেকের অনুসন্ধানেই তাঁরা আবিষ্কার করে ফেললেন এই প্রাসাদ।
জনশ্রুতি অনুযায়ী নাগ বংশের শেষ স্বাধীন রাজা দুর্জন সাল তৈরি করেছিলেন নবরত্নগড় দুর্গ। ৯টি তল ছিল এই দুর্গের, তাই নাম রাখা হয়েছিল নবরত্নগড়। যদিও ঐতিহাসিকদের মতে, দুর্জন সালের শাসনকালের আগেই ১৫৭১ সালে তৈরি হয়েছিল দুর্গটি। মাটির উপরে ৯টি তল ছাড়াও ছিল মাটির নিচে বেশ কয়েকটি গুপ্ত কক্ষ। মূল প্রাসাদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার জন্য তৈরি সুড়ঙ্গটিরও সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যদিও গোপন কক্ষগুলির মধ্যে কী আছে, তা এখনও জানাননি গবেষকরা। মার্চ মাস পর্যন্ত খননকার্য চালানোর পরই সম্পূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। তবে নাগ রাজাদের কোনো গুপ্ত সম্পত্তি যদি থেকে গিয়ে থাকে, তবে তা যে এই কক্ষগুলির মধ্যেই রয়েছে, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
Powered by Froala Editor