পার্কে ঢুকলেই গাছপাতার ফাঁকে ফাঁকে চোখে পড়বে আশ্চর্য সব জন্তু। অবশ্য জীবিত প্রাণী নয়, এই প্রতিকৃতিগুলি গড়ে তোলা হয়েছে শুকনো ডাল, পাতা আর ঘাস দিয়ে। দেখলেই মনে পড়ে যাবে দোল পূর্ণিমার আগে নেড়া-পোড়ার কথা। তবে এই পার্ক ভারতে নয়। সুদূর কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে এমনই আশ্চর্য সব মূর্তি তৈরি করেছেন শিল্পী নিকি লুইস। লকডাউনের অবসরকে কাজে লাগাতেই এই অদ্ভুত পরিকল্পনা মাথায় আসে তাঁর।
ভারতের নানা অঞ্চলে যেমন দেব-দেবীদের মূর্তি তৈরির বিশেষ বিশেষ ঐতিহ্য আছে, তেমনই আছে ভূত-প্রেত বা অপদেবতাদের মূর্তি তৈরির রেওয়াজও। তবে এইসব মূর্তি তৈরি হয় খানিকটা অদ্ভুতভাবে। খড়-কাঠি দিয়ে গড়ে তোলা হয় সেইসব মূর্তি। বাংলার সব জায়গাতেই তো নেড়া-পোড়ার প্রচলন আছে। বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম অঞ্চলে আছে ভূত-চতুর্দশীর রাতে পেত্নী মূর্তি তৈরির রেওয়াজ। আর উত্তরভারতে রামলীলার সময় রাবণের মূর্তিতে তো খড়-কাঠির সঙ্গে সঙ্গে হাউই-বাজিও ব্যবহার করা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই সব মূর্তিই পুড়িয়ে ফেলা হয়।
নিকি লুইসের তৈরি মূর্তিগুলি অবশ্য পুড়িয়ে ফেলার জন্য তৈরি নয়। তবে এক্ষেত্রেও প্রতিটা মূর্তিই কোনো না কোনো কাল্পনিক জন্তু অথবা পৌরাণিক অপদেবতার। রূপকথার গল্প থেকে যেমন নানা চরিত্র নেওয়া হয়েছে, তেমনই আছে ‘স্টার ওয়ার’-এর অদ্ভুত সব ভিনগ্রহীদের মূর্তিও। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এখনও সেভাবে পর্যটক আসছেন না রবার্ট বার্ন-অ্যাবে পার্কে। তাই প্রত্যেকের জন্যই সামাজিক মাধ্যমে এইসব ছবি শেয়ার করেছেন খোদ শিল্পী। আর দেখতে দেখতে ভাইরাল হয়ে উঠেছে সেইসব ছবি। শুকনো ঘাস আর ডাল দিয়ে তৈরি এইসব মূর্তি যেন আরও বীভৎস হয়ে উঠেছে। ভারতেও তো সেই উদ্দেশ্যেই এমন সব মূর্তি তৈরি হয়ে আসছে স্মরণাতীত কাল থেকে। শিল্পের ভাবনায় এভাবেই মিলে যায় প্রাচ্য-পাশ্চাত্য। মিলে যায় ইতিহাসও।
Powered by Froala Editor