ভারতের বর্তমানও যেমন ঘটনাবহুল, ইতিহাসও তেমনই নানা বৈচিত্র্যে ভরা। সেখানে আছে রোমাঞ্চ, বীরত্ব, উত্তেজনা; আবার আছে আশ্চর্য সব জিনিসও। নানা সভ্যতার রথ ছুঁয়ে গেছে এই দেশের মাটি। তারই মধ্যে কিছু কিছু নিদর্শন এমনও থাকে, যা এক মুহূর্তে চমকে দেয় আমাদের। মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি, রাজাপুর তেমনই এক আশ্চর্যের সামনে এনে দাঁড় করায়।
ইতিহাস ভালো লাগুক বা না লাগুক, গুহাচিত্রের কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি। সেই যে আলতামিরার ষাঁড়! ভারতেও এরকম বহু গুহাচিত্র রয়েছে। ওই সমস্ত জায়গা ঐতিহাসিকদের কাছে রীতিমতো স্বর্ণখনি। মহারাষ্ট্রের বিস্তৃত পাহাড় ও গুহায় এমন অনেক নিদর্শনই দেখা যায়। তার মধ্যে অন্যতম রত্নগিরি। পেট্রোগ্লিফ বা গুহাচিত্রের ভরপুর নমুনা রয়েছে সেখানে। আশ্চর্য সব ছবি। ঐতিহাসিকদের গবেষণা বলে, আনুমানিক ১০ হাজার বছর আগে থেকে এই গুহাচিত্রগুলি তৈরি হতে আরম্ভ করেছিল। পর্যটক থেকে ঐতিহাসিক, সবার কাছেই মূল আকর্ষণ রত্নগিরি ও রাজাপুরের এই গুহা।
এখানেই একটু দৃষ্টিপাত করা যাক বেশ কিছু বিশেষ গুহাচিত্রে। কোথাও দেখা যাচ্ছে মাঝখানে একটা বড়ো কোনো জিনিস, তাকে ঘিরে আছে অর্ধচন্দ্রাকার কোনো আচ্ছাদন। কোথাও আবার একটা বিশেষ পশুর ছবি। কোথাও একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে অদ্ভুতভাবে। এই ছবিগুলো আকারেও বেশ বড়ো। ঐতিহাসিকদের এই ছবিগুলোর দিকে বেশি নজর কেন? তার কারণও স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তাঁরা। এই গুহাচিত্রগুলিই প্রাচীন ভারতের সঙ্গে বিদেশের অন্যান্য সভ্যতার যোগাযোগ স্পষ্ট করে দিচ্ছে।
উদাহরণ দেওয়া যাক। একদম প্রথমে যে ছবিটার কথা বলা হল, তার সঙ্গে ঐতিহাসিকরা মিল পেয়েছেন মিশরের স্কারাবের। এই স্কারাব একপ্রকারের এম্বলেম বা ব্রেস্টপ্লেট, প্রাচীন মিশরে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিল এটি। মূলত ফ্যারাওরা পরে থাকতেন এগুলো। হুবহু সেইরকমই দেখতে অনেকগুলো গুহাচিত্র পাওয়া গেছে রত্নাগিরিতে। নিছকই কাকতালীয়? এছাড়াও পাওয়া গেছে বিশেষ এক জন্তুর ছবি। যে কেউ দেখলে সহজেই বলে দেবে, এটা ক্যাঙ্গারুর ছবি। কিন্তু তখনকার দিনের আদিম মানবরা অস্ট্রেলিয়ার এই জন্তুটির কথা জানল কী করে? তাহলে কি বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এই গুহাবাসীদের? নাকি সেই সময় ভারতেও দেখা মিলত ক্যাঙ্গারুর?
আর ওই অদ্ভুত গড়নের মানুষের গুহাচিত্র? তার সঙ্গে ঐতিহাসিকরা তুলনা করেছেন মেসোপটেমিয়ার একটি বিশেষ মূর্তির। নাম ‘দ্য মাস্টার অফ গড’। শুধু এসবই নয়, প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতা ও রোমান সভ্যতায় যেসব চিহ্ন ও প্রতীক ব্যবহার করতে দেখেছি, তারও বেশ কিছু নমুনা গুহাচিত্র রয়েছে রত্নাগিরি ও রাজাপুরের এইসব পাহাড়ে। ঠিক কী করে এগুলো তৈরি হল, কারা করল— ঐতিহাসিকরা গবেষণা করছেন সেসব। হয়ত শেষ আইস এজ বা হিমযুগে পর যে সমস্ত মানুষদের জায়গা জমি সব চলে যায়, তারাই বিশ্বের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তাদেরই একটি অংশ ভারতের দক্ষিণ অংশে এসে উপস্থিত হয়। তাদেরই কীর্তি এসব। তবে গবেষণা এখনও বাকি। রহস্যের দিকে যত এগোনো যায়, ততই নতুন কিছু সামনে আসতে থাকে। দেখা যাক, এখানে আর কী কী ইতিহাস লুকিয়ে আছে!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কুমারী মেরির দুধেই বদলেছিল গুহার রং! আজও সন্তানের আশায় ছুটে আসেন লক্ষ লক্ষ মানুষ