গাছের শরীরের সবুজ কোষের মধ্যেই তৈরি হয় খাবার। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে, বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং সূর্যরশ্মির প্রভাবে খাবার তৈরি করে পাতার মধ্যে থাকা ক্লোরোফিল। কিছু পরজীবি উদ্ভিদ ছাড়া প্রত্যেক গাছের শরীরে সবুজ কলা থাকবেই। অন্যথায় তার মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু এর মধ্যেই অবাক করে বেশ কিছু গাছ। সাধারণ মানুষের কাছে যাদের পরিচয় ‘জম্বি ট্রি’। হয়তো কোনো প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা বা কোনো রোগে সমস্ত সবুজ কোষ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর পরেও ২০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে কিছু গাছ। কিন্তু কীভাবে খাবার পায় তারা? সম্প্রতি সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা।
পাতাহীন গাছেদের পুষ্টির জোগান নিয়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল খুবই সামান্য। তার একটা কারণ এইসমস্ত গাছের সংখ্যা বেশ কম। আর অন্য কারণ, এদের পুষ্টির জোগান আসে মূলত মাটির নিচ থেকে। আর ইলেক্ট্রোলাইট গেজেটের সাহায্যে সেই রসদের হদিশ পেলেন মার্কিন বিজ্ঞানী সুজ্যান স্যামার্ড। দেখালেন, কীভাবে জঙ্গলে একেকটি গাছ অন্য গাছেদের থেকে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে।
জঙ্গলের মধ্যে নানা গাছ নিজেদের মধ্যে খাবার ভাগ করে নেয়, এই তথ্য মোটামুটি বিজ্ঞানীদের জানা ছিল। উঁচু ছায়াদায়ী গাছগুলো সরাসরি সূর্যের আলো পায়। অন্যদিকে ছোটো গাছগুলি সেভাবে সূর্যের আলো না পেয়ে প্রয়োজনীয় খাবার তৈরি করতে পারে না। ফলে তাদের খাবারের জোগান আসে মূলত বড়ো গাছেদের থেকেই। তবে সুজ্যান দেখালেন, বয়স বা রোগের প্রভাবে খাবার তৈরিতে অক্ষম হয়ে পড়া গাছেরাও একইভাবে পুষ্টি সংগ্রহ করে। তাদের মূলের মধ্যে থাকা অণুজীবদের মাধ্যমে পাশের গাছদের কাছে বার্তা পাঠায়। আর সেই বার্তা পেয়েই মূলের মাধ্যমে খাবার পাঠিয়ে দেয় আশেপাশের গাছ।
মানুষের সভ্য সমাজব্যবস্থা নিয়ে গর্বের শেষ নেই। অথচ তার মধ্যেই বৈষম্য আর অসহযোগী মানসিকতার বিষ ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশ। সেখানে গাছেদের মধ্যে এই পারস্পরিক সহযোগিতার চরিত্র সত্যিই অবাক করে। প্রতিটি জীবনের মূল্য যে তাদের কাছে অপরিসীম। মানুষও কি পারে না গাছের মতো সমস্ত রসদ ভাগ করে নিতে?
Powered by Froala Editor