মা মিৎ কিল ত্বং বনা: শাখাং মধুমতীমিব।
- অথর্ববেদ, ১.৩৪.৪।
"ফুল্ল শাখা যেমন মধুমতী।
মধুরা হও তেমনি মোর প্রতি।।"
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকৃত অনুবাদ।
বঙ্গসাহিত্যে তন্ত্রনির্ভর হরর-থ্রিলারের ঘরানাটিতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Bibhutibhushan Bandyopadhyay) মহাজন-বিশেষ। তারানাথ তান্ত্রিকের (Taranath Tantrik) মাত্র দুটি ছোটোগল্প লিখে তিনি পাঠক-সাধারণের চিত্তবিজয় করেছিলেন, উত্তরকালে তাঁর পুত্র তারাদাসের হাতে সেই চরিত্রেরই ক্রমশ সম্প্রসারণ ঘটেছে। কী ছিল ওই দুটি গল্পে, যার ফলে অনায়াসে ক্লাসিক সাহিত্যে উত্তীর্ণ হল তারানাথ-কাহিনী? একটু আলোচনা করা যাক।
তারানাথের গল্প আর তন্ত্রের মূল বইগুলি পাশাপাশি রেখে মিলিয়ে পড়লে, অনেক তথ্যগত বিপর্যয় চোখে পড়বে। এই যেমন, প্রথম গল্পে মাতু পাগলী ওরফে মাতঙ্গিনী তারানাথকে দু'বার শবসাধনার নির্দেশ দিয়েছে, একবার স্বয়ং নিজের শবের ওপরে, আরেকবার নদীর জলে ভেসে আসা একটি ষোড়শীর শবের ওপরে। কিন্তু, স্ত্রীলোকের শব নিয়ে সাধনা তন্ত্রশাস্ত্রে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে বৃহৎ তন্ত্রসারে উদ্ধৃত ভৈরবতন্ত্রবচন- "স্ত্রীজনঞ্চেদৃশং রূপং সর্ব্বথা পরিবর্জয়েৎ"।
আরও পড়ুন
যে অভয়ারণ্যে পাখির কলকাকলি, ত্রস্ত হরিণের সঙ্গে রয়েছেন বিভূতিভূষণও
দ্বিতীয় গল্পে, তারানাথের গুরু সাধুজী, তাঁর গুরু কাঁলিকানন্দ ব্রহ্মচারীর উক্তি স্মরণ করেছেন। কালিকানন্দ বলেছিলেন যে, ভূতডামর তন্ত্রের প্রথম শ্লোকই হল "অথাত: সংপ্রবক্ষামি যোগিনীসাধনমুত্তমম্" ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি ভূতডামরের ষোড়শ পটলের প্রথম শ্লোক। এই বিভ্রান্তি হল কেন? সম্ভাব্য কারণ, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকৃত 'বৃহৎ তন্ত্রসার' সংকলনে যোগিনীসাধনা বিষয়ে আলোচনা এভাবেই শুরু হচ্ছে, "অথ যোগিনীসাধনং। ভূতডামরে- অথাত: সংপ্রবক্ষামি যোগিনীসাধনমুত্তমম্।..." ইত্যাদি। অর্থাৎ গুরুপরম্পরাক্রমে এই ভূতডামরসিদ্ধ সাধকেরা কেবল সংকলন গ্রন্থ তন্ত্রসারধৃত উদ্ধৃতিগুলিই পড়ে গিয়েছেন, এবং ভুল ধারণা পোষণ করে চলেছেন! মূল বইটি তাঁরা কখনও পড়েনইনি! এ কি আদৌ সম্ভব?
আরো আছে। মূল গ্রন্থে গল্পের কিঙ্কিণী দেবীর উল্লেখ নেই। কনকবতী দেবীর কথা আছে বটে, কিন্তু তিনি সাধককে ভার্য্যাভাবে কৃপা করেন, গল্পের তথ্য অনুযায়ী মাতৃভাবে নয়। আর গল্পের নায়িকা মধুসুন্দরী দেবীর ব্যাপারটি তো অতিশয় গোলমেলে।
ভূতডামরে 'মধুমতী' নাম্নী এক দেবী অবশ্যই আছেন। মধুমতী সাধনা অতিশয় প্রসিদ্ধ। চৈতন্যভাগবতে বৃন্দাবন দাস ঠাকুর বলেছেন, নবদ্বীপে সপার্ষদ গৌরাঙ্গের রাত্রিকালীন কীর্তনানন্দ শুনে বহির্মুখ ব্যক্তিরা সন্দেহবশে বলাবলি করত, "ইহারা সকলে মধুমতী সিদ্ধি জানে"। নিগমামন্দ ঠাকুরও তাঁর 'তান্ত্রিক গুরু' বইতে মধুমতী সাধনার বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যাটা এই যে, ভূতডামরে 'মধুসুন্দরী'-র কথা তো নেই। এবং তারানাথ তার আরাধ্য মধুসুন্দরীর ধ্যান ও জপ্য মন্ত্র যা উল্লেখ করেছে, তার সঙ্গে ভূতডামরোক্ত মধুমতী দেবীর ধ্যানমন্ত্র জপ্যমন্ত্রাদির বিস্তর ফারাক। ফারাক আছে পূজাপদ্ধতি ও পূজার ফলাফলেও। সম্ভবত, ভূতডামরে উল্লিখিত 'সুরসুন্দরী' ও 'মধুমতী'- এই নামদুটির খণ্ডযোজনা করে বিভূতিভূষণ 'মধুসুন্দরী' নামটি প্রস্তুত করেছিলেন।
আরও পড়ুন
মুছে আসা শালবন, মুছে আসা বাংলা, ফুলডুংরি পাহাড়— এই পথে একা একা হাঁটতেন বিভূতিভূষণ
তাহলে, নিশ্চিতভাবেই, মধুসুন্দরী দেবীর ব্যাপারে বিভূতিভূষণের নিজস্ব কল্পনা সর্বজনমান্য শাস্ত্রকে সবচেয়ে বেশি ছাপিয়ে গিয়েছে।
তারানাথ তার যে অভিজ্ঞতাগুলির কথা বলেছে, সেগুলি সে নিজে কতখানি সত্য বলে বিশ্বাস করে, তাতেই সন্দেহ আছে। প্রথম গল্পে শবসাধনার সম্পূর্ণ বিবরণটিই যে মাতঙ্গিনীর দেখানো মায়া, কিংবা সম্মোহনের ফল - এতো তারানাথের নিজের জবানিতেই আছে। আর দ্বিতীয় গল্পে, পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে সে যে দিব্যাঙ্গনাকে দেখেছিল, তাঁকেও সে অলীকদৃশ্য বলেই সন্দেহ করেছিল, বলেছিল "সে সময় জ্বরের পূর্বাবস্থায় অসুস্থ মস্তিষ্কে কি বিকার দেখে থাকব- হয়তো চোখের ধাঁধা"। তারপর যখন সে প্রত্যহ মধুসুন্দরী দেবীর দেখা পাওয়া শুরু করল, তখনও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিল, "কে একজন পাগল, বোধহয় বাঙালীই হবে, অল্পবয়সে বরাকর নদীর ধারে শালবনে সন্ধ্যাবেলা ব'সে থাকে- আর আপন মনে বিড়বিড় ক'রে বকে।" তিনমাস পরে তার সন্ধান পেয়ে বাড়ির লোকেরা তারানাথকে ধরে আনতে চেষ্টা করলে তারানাথ একেবারে বেঁকে বসে, সেই সময়ের কথা মনে করে সে নিজেই কথককে বলেছে, "আমার তখন সত্যিই জ্ঞান নেই, সত্যিই আমি ক্ষিপ্ত, উন্মাদ।" জোর করে বাড়ি আনার পর, তার অবস্থা দেখে সকলে মন্তব্য করে, "কে কি খাইয়ে পাগল ক'রে দিয়েছে।" এরপর উন্মাদের চিকিৎসা শুরু হয়, এবং বছরখানেক পরে তারানাথের অবস্থা স্বাভাবিক হলে তার বিয়ে দেওয়া হয়। তারানাথের স্ত্রীও কিন্তু তার কথায় অবিশ্বাস করেছিল, বলেছিল সাধু নির্ঘাৎ কোনও প্রক্রিয়ায় তাকে পাগল করে দিয়েছিল। এখন, তন্ত্রবিদ্যায় অনভিজ্ঞ গণসাধারণ পুরো ব্যাপারটাকে পাগলের পাগলামি বলে উড়িয়ে দিতেই পারে, কিন্তু তারানাথ স্বয়ং? সে যে নিজেই কথককে ওই তিন মাসের বিবরণ সম্পর্কে বলেছে, "এখন কিন্তু সেটা স্বপ্ন বলে মনে হয়." অর্থাৎ স্বয়ং তারানাথ সহ সকলেই ওই দিব্যাঙ্গনা-মিলনের ঘটনাটিকে উন্মাদের অলীক স্বপ্নাতুর কল্পনা হিসাবেই ভেবেছে। এমনকী বিভূতিভূষণের গল্পের কথক অবধি বলেছে, যতক্ষণ তারানাথ গল্প বলছিল ততক্ষণ সংশয় জাগেনি, কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে ট্রামে উঠেই... "কি মনে হইল তাহা আর না-ই বা বলিলাম?"
এই বহুস্তরীয় অবিশ্বাস, এই সর্বজনীন সংশয় - বিভূতিভূষণ কি নিরর্থক আনলেন গল্পের মধ্যে? যিনি সে যুগে বসে আফ্রিকা না গিয়ে কেবল বই পড়েই তার নিখুঁত ও সানুপুঙ্ক্ষ বর্ণনা দিয়ে একখানা 'চাঁদের পাহাড়' লিখে ফেলতে পারেন, তিনি বঙ্গভূমির তন্ত্রবিদ্যা সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে এত তথ্যবিপর্যয় ঘটাবেন, এ কথা কি আদৌ বিশ্বাস্য? নিশ্চয়ই নয়।
আরও পড়ুন
‘বকুনি খেলেই কাঁদে’, তবু তরুণী স্ত্রী-র বিরহ সহ্য হত না বিভূতিভূষণের
তাহলে বলতে হয়, গল্পের ছলে তন্ত্রবিদ্যার গরিমা প্রচার আদৌ বিভূতিভূষণের উদ্দেশ্যই নয়। তাঁর অন্য রচনার প্রমাণেও এ বিষয়ে সাক্ষ্য পাওয়া যাবে। 'দেবযান' উপন্যাসে বিভিন্ন মত ও পথের বিদেহী সাধকদের চিত্র এঁকেছেন বিভূতিভূষণ- সেখানে তন্ত্রমার্গী সাধক একজনও নেই!
অতঃপর? তাহলে, তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পদুটির নিগূঢ় তাৎপর্য কী?
প্রথম গল্পেই বলা হয়েছে, তারানাথের জীবনের প্রবল নেশাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে "নারী"। এবার, ওই গল্পে তারানাথ যত অলীক দৃশ্য দেখেছে, তার প্রত্যেকটিতে নারীপ্রাধান্য। কেমন নারী? ষোড়শবর্ষীয়া তরুণী। মাতঙ্গিনীকে সে ষোড়শী তরুণীরূপে দেখেছে, তারপর মাতুর কথামতো নদীর জল থেকে টেনে তোলা শবকেও সেই ষোড়শীরূপেই আবিষ্কার করেছে, সেই এক চোখ মুখ তার। শবসাধনার সময়ে সে নদীর জল থেকে উঠে আসতে দেখেছে এক দল অলীকমানবীকে। তারা কেমন? "অল্পবয়সী বৌ, মুখে ঘোমটা টানা..." যাদের মুখ আবৃত, তাদের ‘অল্পবয়সী’ বলে চিহ্নিত করার একমাত্র উপায় তো যুবতীসুলভ দেহসৌষ্ঠবের দিকে দৃষ্টিপাত! কিছু পরে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আর এক মায়াবিনী, নিজেকে "মহাবিদ্যাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ" ষোড়শী বলে পরিচয় দিয়ে জানতে চেয়েছে, "আমায় তোমার পছন্দ হয় না?" তার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই তারানাথ সভয়ে আবিষ্কার করেছে, তার আসনস্বরূপ শব, আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মায়াময়ীর রূপ অবিকল এক। এরপর বিকটমূর্তি মহাডামরী-সহ অন্যান্য বিভীষিকা দেখে আতঙ্কে আসন ত্যাগ করে পালাতে গিয়ে চেতনা হারিয়েছে তারানাথ, এবং জ্ঞান ফেরার পর আবিষ্কার করেছে, এতক্ষণ সে যা দেখছিল সবই মাতু পাগলীর সৃষ্ট অলীক বিভ্রম।
মনোবিকলনে অভ্যস্ত সমালোচক স্পষ্টভাবেই বুঝতে পারেন, এই সমস্ত অলীকদৃশ্য আসলে প্রবল যৌনক্ষুধাতুর তারানাথের যৌবনস্বপ্ন মাত্র। সেই স্বপ্নে কেন 'ষোড়শী'-র এত বাড়াবাড়ি? কারণ কামসূত্র অনুসারে ষোড়শ বর্ষ অবধিই নারী ভোগ্যারূপে শ্রেষ্ঠ!
এই গেল নারীসঙ্গলিপ্সু যুবকের কামজ অতৃপ্তির গল্প। দ্বিতীয় গল্পটি তৃপ্তির। এক মধুময়ী, সুন্দরীতমা নারীকে একান্ত আপন করে পাবার গল্প। তবে নেহাত ইন্দ্রিয়বশ্যতার ছাঁচে এ গল্পকে ব্যাখ্যা করা অনুচিত হবে। মধুসুন্দরী-বিলাসী তারানাথের রোম্যান্টিক প্রেমিক মনও সেসময় জাগ্রত ছিল, তার প্রমাণ মিলবে আশ্চর্য কবিত্বময় উচ্চারণে:
"কেবল মনে হয় কখন সন্ধ্যা নামবে বরাকর নদীর শালবনে, কখন দেবী মধুসুন্দরী নায়িকার বেশে আসবেন! সারারাত্রি কোথা দিয়ে কেটে যাবে স্বপ্নের মতো, নেশার ঘোরের মতো। আকাশ, নক্ষত্র, দিক-বিদিকের জ্ঞান লুপ্ত হয়ে যাবে কয়েক প্রহরের জন্যে - কয়েক প্রহরের জন্যে সময় স্থির হয়ে, নিশ্চুপ হয়ে স্থাণুর মত অচল হয়ে থেমে থাকবে বরাকর নদীতীরের প্রাঙ্গণে।"
মধুসুন্দরী তারানাথকে কেবল তপ্ত যৌবনের আস্বাদ দিয়েছিলেন তা নয়, তিনি দিয়েছিলেন তেজস্কর মদিরার মতো তীব্র ভালোবাসার স্বাদ, নিবিড় বন্ধুত্ব। কখনও সাঁওতাল বধূর প্রতি তারানাথের চিত্তচাঞ্চল্য লক্ষ্য করে দেবী অমানুষিক ক্রোধ প্রদর্শন করেছেন, আবার কখনও ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান করেছেন বালিকার মতো। বিদায়ের ক্ষণে তিনি বলেছিলেন, এই নদীতীরের রাত্রিগুলির স্মৃতি তিনিও মনে রাখবেন, কারণ যথার্থ প্রেমিক সাধক তাঁর কাছেও দুর্লভ!
প্রৌঢ় তারানাথ আক্ষেপ করেছেন, সেই তিন মাসের মতো "সত্যিকারের বাঁচা"-র স্বাদ তিনি আর কখনও পাননি। তাঁর অবশিষ্ট জীবন হয়ে উঠেছে সেই দিব্যাঙ্গনার স্মৃতির উদ্দেশে এক নিরুপায়, নিরানন্দ বিরহবিষাদ।
এইবার, শুষ্ক মনোবিকলনকারীর কাছে মধুসুন্দরীও অলীক বলে, যৌবনস্বপ্নাতুর উন্মাদচিত্তের ভ্রম বলে প্রতিভাত হবেন সন্দেহ নেই। কিন্তু, তাতে ক্ষতিও নেই কিছু।
আমরা এতক্ষণে বুঝে গেছি, এই গল্পযুগলে তন্ত্রাচার আসলে নির্মোক মাত্র, তার আড়ালে নি:শব্দে বয়ে চলেছে আতপ্ত প্রেমকাতর যুবামনের উন্মাদনার অশ্রু-আখ্যান।
কেবল এই দুটি গল্পেই তো নয়! 'আরক' গল্পের নায়কও নির্জন রাত্রিতে স্নানরতা অলীকমানবীদের দেখে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন, 'মেঘমল্লার' গল্পেও প্রাণপণে দেবী সরস্বতীকে অধিকার করতে চেয়েছেন তন্ত্রবিদ্। 'আরণ্যক'-এও তো, কোন এক মায়ামানবীর টানে নিরুদ্দিষ্ট হয়েছিল সেই আরণ্যযুবক!
আচ্ছা, শিল্পী তাঁর শিল্পে সচেতনে, বা অচেতনে আত্ম-প্রক্ষেপ ঘটান, এ তো আমাদের জানা। এবার যদি, স্বয়ং লেখকের জীবনের দিকে একবার দেখি?
তখন, আমরা দেখতে পাব, বিভূতিভূষণের থিয়োসফিকাল সোস্যাইটিতে যোগদান, পরলোক ও প্রেতচর্চায় আগ্রহের প্রত্যক্ষ কারণই হচ্ছে তাঁর প্রথমা পত্নী গৌরী দেবীর অকালবিয়োগ। ১৩২৪ সালের ৩১ শ্রাবণ বিবাহ, ১৩২৫ সালের ৬ অগ্রহায়ণ পত্নীপ্রয়াণ। গৌরীর সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যমাধুর্যের দিনগুলি ছিল স্বল্পস্থায়ী। এবং গৌরী যৌবনে পদার্পণের আগে, কিশোরীবেলাতেই গতাসু হয়েছিলেন।
গৌরীকে কখনও ভুলতে পারেননি বিভূতিভূষণ। 'আরণ্যক' গৌরীকেই উৎসর্গ করা, ঘাটশিলার বাড়ির নাম 'গৌরীকুঞ্জ', এমনকী বাইশ বছর বাদে দ্বিতীয়া স্ত্রীকে প্রেমসম্বোধন করতে গিয়েও স্মৃতিকাতর বিভূতিভূষণ অকপট- "প্রিয়তমাসু, এই সম্বোধনটি কোনো মেয়েকে লিখিনি গৌরী ছাড়া।"
এইবার কি, "পথের কবি"-র আঁতের কথা বোঝা যাচ্ছে? তারানাথ তান্ত্রিক তো লেখকেরই দ্বিতীয় সত্তা! প্রথম কাহিনীতে মৃত্যুবিভীষিকাময় শ্মশানের মধ্যে সে ক্রমাগত দেখে অকালপ্রয়াতা কিশোরীর মায়াবিভ্রম, আর দ্বিতীয় কাহিনীতে ব্যক্ত করে স্বল্পস্থায়ী মিলনবিলাসের মধুস্মৃতি!
তারানাথ তান্ত্রিকের নির্মোকের আড়ালে লুকিয়ে আছে বিরহী বিভূতিভূষণের অতি মৃদুস্বর প্রিয়াসম্ভাষণ - "প্রিয়তমাসু!"
Powered by Froala Editor