৪৫০০ বছর পেরিয়ে আজও অক্ষত খুফুর ‘সৌরনৌকা’!

প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম মিশরের গ্রেট পিরামিড অফ গিজা। বলতে গেলে, বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় আশ্চর্যও বটে। ১৯৫৪ সালে এও পিরামিডেরই এক গোপন কক্ষ থেকে আশ্চর্য এক জাহাজ উদ্ধার করেছিলেন মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক কামাল এল-মাল্লাখ। গত বছরই প্রায় ৪৬০০ বছরের প্রাচীন এই নৌকাটিকে পিরামিডের মধ্যে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মিশরের গ্র্যান্ড মিউজিয়ামে। খুফুর পিরামিডে প্রাপ্ত এই নৌকা পরিচিত ‘সৌরনৌকা’ বা ‘সোলার বোট’ (Solar Boat) নামে। আশ্চর্য এই নৌকার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একরাশ রহস্য।

প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন, মৃত্যুর পরেও একটি পৃথক জীবন রয়েছে মানুষের। মৃত্যু পরবর্তী বিচারের পর সেই পরলৌকিক জগতে মানুষ আশ্রয় পায় সূর্যদেবতা ‘রা’-এর কাছে। সূর্যদেবতার কাছে খুফুকে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই, এই বিশেষ নৌকাটিও সমাধিস্থ করা হয়েছিল তাঁর দেহের সঙ্গে। সেই কারণেই ‘সৌরনৌকা’ হিসাবে পরিচিত এই জাহাজ। শুধু খুফুই নয়, একাধিক মিশরীয় ফ্যারাও-এর সমাধিতেই এই একই ধরনের নৌকার হদিশ পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। তাহলে এই নৌকার বিশেষত্ব কী? আর তা নিয়ে রহস্যই বা কেন?

আসলে, গিজার গ্রেট পিরামিডের নিচে যে গোপন কক্ষে সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল এই নৌকার, সেটি সম্পূর্ণভাবে এই পিরামিডের নিচে অবস্থিত নয়। বরং, তা পিরামিডের একপাশে অবস্থিত। খুফুর পিরামিডের মধ্যে দিয়ে সরু সুড়ঙ্গের মাধ্যমে সংযুক্ত এই কক্ষটি। একদল গবেষকের অনুমান, আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে এই কক্ষটির উপরেও দাঁড়িয়ে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পিরামিড। যা সময়ের সঙ্গে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেছে কিংবা তা ধ্বংস করেছিলেন খোদ খুফুই।

এখানেই শেষ নয়। সাধারণত, ফ্যারাওদের সমাধিতে যে-সকল ‘সৌরনৌকা’ সমাধিস্থ করা হত, সেগুলি বিশেষভাবে তৈরি করা হত ফ্যারাও-এর মৃত্যুর পর। অর্থাৎ, প্রায় নতুন অবস্থাতেই পিরামিডের মধ্যে বন্দি করা হত সেগুলিকে। অথচ, খুফুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। সমাধিস্থ করার আগে এই নৌকা রীতিমতো ব্যবহৃত হয়েছে, তার স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। লেবানিজ সিডার উডে তৈরি এই নৌকায় ছাপ রয়েছে গেছে জলের। এবং সেই ছাপও একাধিক স্তরের। পাশাপাশি এই নৌকার গঠনও বেশ আশ্চর্যকর। নৌকাটির ভার একদিকে বেশি। ডেকের ওপরেও রয়েছে একাধিক আচড়ের দাগ। প্রশ্ন ওঠে, কেন এমন অসম ভারের নৌকা তৈরি করা হয়েছিল খুফুর জন্য? এই অসম নৌকা ব্যবহৃত হত কীভাবে? আর ডেকের দাগগুলিই বা কীসের?

গবেষকদের একাংশের মতে, এই নৌকা করেই খুফুর মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়েছিল পিরামিডে। আবার অনেকের বিশ্বাস, এই পিরামিড তৈরির পাথর নিয়ে আসার জন্যই ব্যবহৃত হত এই নৌকা। সেই কারণেই জলের দাগ। এমনকি পাথরের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতেই একদিকে নৌকার ভার বেশি রেখেছিলেন কারিগররা। অবশ্য কোনো তত্ত্বের পিছনেই যুক্তিযুক্ত কোনো প্রমাণই দিতে পারেননি গবেষকরা। আজও অনুসন্ধান চলছে এই রহস্যের। সেইসঙ্গে, গবেষকদের বিশ্বাস, গিজার এই পিরামিডের নিচে নাকি রয়েছে আরও কয়েকটি গোপন কক্ষও। কী আছে সেখানে? সেই উত্তর দেবে সময়ই…

Powered by Froala Editor

Latest News See More