আগের দিন রাতেও দিব্যি গল্পগুজব করেছেন হোয়াটসঅ্যাপে। অথচ, সকালে ঘুম থেকে উঠে আর কিছুতেই মনে করতে পারছেন না কীভাবে ‘A’ লিখতে হয়। কিংবা ধরুন, ঠিক কী কাজে ফ্রিজ ব্যবহৃত হয়— সেটাই আর মনে পড়ছে না আপনার। কী করবেন এমন সমস্যার সম্মুখীন হল?
শুনতে ডেস্টোপিয়ান সায়েন্স ফিকশনের মতো লাগলেও— বিগত দেড় বছর ধরে এমনই অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটে চলেছে কানাডায় (Canada)। যার জন্য দায়ী এক রহস্যময় স্নায়বিক রোগ (Neurological Disease)। শুধু স্মৃতিভ্রমই নয়, এই রোগের প্রভাবে নিজের ওপরেই কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকছে না মানুষের। কিন্তু দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এখনও এই রহস্যের কোনো সমাধান খুঁজে বার করতে পারেননি গবেষকরা। এই রোগের উপসর্গ কী কী? কীভাবেই বা তাকে চিহ্নিত করা গেল?
শুরু থেকেই বলা যাক ঘটনাটা। ২০২০ সালে মে মাস সেটা। কানাডার ৩৩ বছর বয়সী পর্বতাভিযাত্রী টেরিলিন পোরেলের পায়ে হঠাৎ করেই যন্ত্রণা শুরু হয়। অনেকটা পিন ফোটার মতো। প্রাথমিকভাবে তেমনটাই ভেবেছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন ট্রেকিং-এর সময় হয়তো আঘাত লেগেছে কোনোভাবে। তবে সেই ব্যথা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। ইলেকট্রিক শকের মতো সেই যন্ত্রণায় নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান পোরেলে। সেইসঙ্গে অতিপরিচিত বিষয়গুলিও ধীরে ধীরে ভুলে যেতে শুরু করেন তিনি। পরিবর্তন আসতে শুরু করে স্বকীয় প্রতিবর্ত ক্রিয়াতেও।
না, দেরি করেননি তিনি। দ্রুত স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন পোরেলে। কিন্তু তাঁরাও কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে ব্যর্থ হন। প্রাথমিকভাবে কিছু ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেই যন্ত্রণা। আজ দেড় বছর পেরিয়ে আসার পর এখনও সম্পূর্ণভাবে সুস্থতা ফিরে পাননি তিনি।
আরও পড়ুন
মুম্বাই শহরের অজানা ইতিহাসকে তুলে ধরতে উদ্যোগ তরুণদের
শুধু পোরেলেই নন, কানাডার ব্রুসউইকের একাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এমনই রহস্যময় স্নায়ুরোগে। ২০২০ সালেই এই রোগের সম্পর্কে তদন্ত করতে একটি বিশেষ চিকিৎসক কমিটি তৈরি করেছিল কানাডা প্রশাসন। প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের পরেই ধামাচাপা পড়ে যায় সেই তদন্ত। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সেই রিপোর্ট। আর তাতে উল্লেখিত হয়েছে সব মিলিয়ে ৪৮ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছিলেন এই রোগে। এবং তাঁরা সকলেই বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। নতুন করে আক্রান্ত হননি কোনো মানুষ। তবে বেসরকারি রিপোর্ট ও স্থানীয় হাসপাতালগুলির নথি বলছে অন্য কথা। আক্রান্তের সংখ্যাটা নয় নয় করেও দেড় শতাধিক। পাশাপাশি আক্রান্তরা এখনও তাঁদের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাননি।
আরও পড়ুন
বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েও অটুট জেদ, গলফ-দুনিয়ায় নজির ব্রিটিশ খুদের
খাবারে বিষক্রিয়া, পরিবেশ দূষণ, পিটিএসডি— গবেষকদের অনুমান, রহস্যময় এই রোগের পিছনে এই কারণগুলিই দায়ী। তবে কোনো পরীক্ষাতেই তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও। অন্যদিকে এমন ভয়াবহ একটি ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কানাডা প্রশাসন। আরও কত মানুষ আক্রান্ত হবেন এই রোগে? কানাডা সরকারের তরফে কী ব্যবস্থাই বা নেওয়া হবে তাঁদের জন্য? জানা নেই উত্তর…
আরও পড়ুন
‘রিটায়ার্ড হাসবেন্ড সিনড্রোম’! অদ্ভুত রোগে ভুগছেন প্রথম বিশ্বের মহিলারা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বয়স ১৮, শরীর ১৪৪ বছরের! বিরল ‘বেঞ্জামিন বটন’ রোগে প্রয়াত ব্রিটিশ কিশোরী