৫০ বছর পর সিরিয়াল কিলারের লেখা সাংকেতিক চিঠির পাঠোদ্ধার

কেটে গেছে ৫০ বছরেরও বেশি সময়। তবে এতদিন ধরেই অমীমাংসিত ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার এক গণহত্যাকারীর রহস্য। ‘জোডিয়াক কিলার’ নামে একের পর এক খুন করে গেছেন তিনি। আর প্রতিটি মৃতদেহের সঙ্গে রেখে গেছেন একটি করে চিঠি। ‘জোডিয়াক কিলার’-এর খোঁজ যেমন অর্ধশতকেও দিতে পারেনি ক্যালিফোর্নিয়া পুলিশ, তেমনই পাঠোদ্ধারও সম্ভব হয়নি তাঁর লেখা চিঠিগুলির। তবে এতদিন পেরিয়ে এসে ক্রিপ্টোগ্রাফি বিশেষজ্ঞের একটি দল শেষ অবধি খানিকটা হলেও জট খুললেন রহস্যের।

ভার্জিনিয়া প্রদেশের সফটওয়্যার ডেভেলপার ডেভিড ওরাঞ্চক, বেলজিয়ান প্রোগ্রামার জারল ভ্যান আইকেকে এবং অস্ট্রেলিয়ান গণিতবিদ স্যাম ব্লেকের যৌথ প্রচেষ্টায় শেষ অবধি ডিকোড সম্ভব হল এমনই একটি রহস্যময় চিঠির। যা ১৯৬৯ সালে ফ্রান্সিসকো ক্রোনিকল পত্রিকায় পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং হত্যাকারী। বলাই বাহুল্য, সাধারণ ভাষায় লেখা নয় এই চিঠি। তবে পরিচিত কোনো ইংরাজি হরফও না। সব মিলিয়ে ৩৪০টি চিহ্নের সমাহারে লেখা হয়েছিল চিঠিটি।

তবে ততটাও সহজ ছিল না এই মেসেজ ডিকোড করা। আজ থেকে প্রায় দেড় দশক আগে ২০০৬ সালে ডিকোডিংয়ের কাজ শুরু করেছিলেন প্রোগ্রামার ডেভিড ওরাঞ্চক। শেষ অবধি কোডিংয়ের ধরণ এবং অর্থ উদ্ধারের পর, অনুসন্ধানে যুক্ত তিন বিশেষজ্ঞই ভেবেছিলেন হয়তো এর ফলে মিলবে যুক্তরাষ্ট্রের নৃশংস সিরিয়াল কিলারের পরিচয় কিংবা উদ্দেশ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিঠির বিষয় হতাশ করে সকলকেই। বার বার আইন এবং পুলিশ প্রশাসনের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার দক্ষতাকেই বড়াই করে লিখেছিলেন ‘জোডিয়াক কিলার’।

“আমার ধরার অক্লান্ত প্রচেষ্টার মধ্যে মজা পাচ্ছেন নিশ্চয়ই? তবে ধরা পড়লেও আমি গ্যাস চেম্বার, শাস্তিকে ভয় পাই না। বরং আমার মৃত্যুদণ্ড হলে আমি তাড়াতাড়িই পৌঁছাতে পারব স্বর্গে। সেখানে আমার সমস্ত কাজ করার জন্য অনেক দাস-দাসীই সংগ্রহ করা হয়ে গেছে”, এমনটাই ছিল সে চিঠির বয়ান। তবে কোনোরকম বিরাম চিহ্ন ছাড়াই একটানা লিখে যাওয়া কথাগুলো।

তবে এই চিঠিই তাঁর সন্ত্রাসকালে লেখা প্রথম কোনো চিঠি নয় সংবাদপত্রে। এমন একাধিক চিঠিই তিনি লিখেছেন একেক রকম সাংকেতিক ভাষায়। ১৯৬৯ সালে এমনই এক চিঠির বার্তাকে ডিকোড করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার এক স্কুল শিক্ষক এবং তাঁর স্ত্রী। তাঁরাই সর্বপ্রথম হদিশ দিয়েছিলেন ‘জোডিয়াক কিলার’ নামের পিছনে লুকিয়ে থাকা রহস্যের। সেই চিঠিতে উল্লেখ ছিল, ‘আমি হত্যা করতে পছন্দ করি, কারণ আমার ভালো লাগে।’ সেইসঙ্গে ইঙ্গিত দেওয়া ছিল আসলে পারলৌকিক জীবনের জন্য দাস-দাসী সংগ্রহ করে চলেছেন তিনি। আর সে জন্যই একের পর এক হত্যায় তিনি হাত সেঁকে নিচ্ছেন রক্তে। আর পারলৌকিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে খুনী হয়ে ওঠার জন্যই এমন অদ্ভুত নাম নিয়েছিলেন তিনি।

তবে ক্রিপ্টোগ্রাফার ওরাঞ্চক জানাচ্ছেন, সদ্য ডিকোড করা বার্তাটি বোঝার পক্ষে আরও জটিল এবং কঠিন ছিল। ৩৪০টি সাইফারের সংমিশ্রণে লেখা চিঠিটি পড়তে হয়েছে পাতার ডান দিকের উপরের কোণ থেকে উল্টোদিকের কোণ অবধি কর্ণ-বরাবর। তবে সরলরেখায় নয়। প্রতি লাইনে দুটি করে হরফ ছেড়ে, তৃতীয় হরফ মেলালে তবেই উঠে আসছে অর্থবহ কোনো শব্দ বা প্রতিক্রিয়া। উল্লেখ্য ১৯৫০-এর দশকে মার্কিন সেনাবাহিনীতে এই একই ধরণের সাইফার এবং সাংকেতিক চিঠির ব্যবহার হত। খানিকটা আলাদা হলেও মার্কিন সেনার ক্রিপ্টোগ্রাফি ম্যানুয়ালে রয়েছে তাঁর সম্পূর্ণ বিবরণ। কিন্তু তা কীভাবে এমন এক দাগী সিরিয়াল কিলারের হাতে গিয়ে পৌঁছাল, তা এক প্রকার রহস্যই। বা আদৌ পৌঁছেছিল কিনা তা তাঁর সম্পূর্ণ নিজের তৈরি, সন্ধে থাকছে সেই জায়গাতেও। 

আরও পড়ুন
‘ভালো লাগে তাই খুন করি’, ধরা পড়েও নির্বিকার সিরিয়াল কিলার

ক্যালিফোর্নিয়া কুখ্যাত যোডিয়াক কিলারের সন্ত্রাসের দিন শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তবে তাঁর তৈরি চিঠি এবং পরিচয়ের রহস্য নিয়ে আজও চলছে অনুসন্ধান। আদৌ তিনি জীবিত রয়েছেন না অভিপ্রেত পারলৌকিক জগতে দিন কাটাচ্ছেন বহাল তবিয়াতে, তা আজও অজানা সকলের কাছে...

Powered by Froala Editor

More From Author See More