অরণ্যের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র পাথরের ঢিবি। দূর থেকে দেখলে হঠাৎ করে তাদের বোল্ডার মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তবে আদতেও সাধারণ কোনো পাথর নয় এগুলি। বরং, সেগুলি পাথরের তৈরি গোলাকার পাত্র। সম্প্রতি আসামের (Assam) চারটি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে সন্ধান মিলল এমনই অদ্ভুত এবং রহস্যময় প্রস্তরপাত্রের। গবেষকদের অনুমান পাত্রগুলির বয়স কমপক্ষে আড়াই হাজার বছর।
সম্প্রতি এশিয়ান আর্কিওলজি বিজ্ঞানপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা যৌথভাবেই জড়িয়ে রয়েছেন এই আবিষ্কার ও রহস্যময় পাত্রগুলির বিশ্লেষণের সঙ্গে। মূল গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উত্তম বাথারি এবং নর্থ-ইস্টার্ন হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তিলক ঠাকুরিয়া।
আসামের চার জেলায় প্রায় ১০টি প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রে সন্ধান মেলে বেলেপাথরের তৈরি এই পাত্রের। সব মিলিয়ে গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন প্রায় ৭০০-রও বেশি পাত্র। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রতিটি পাত্রের আকার ও আয়তন সদৃশ নয়। কোনোটি গোলকাকৃতির, কোনোটি আবার বেলনাকার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে কারা বানিয়েছিল এই পাত্র? কী কাজে ব্যবহৃত হত সেগুলি? পাশাপাশি কেনই বা পাত্রগুলি মাটির মধ্যে সমাধিস্থ করা হয়েছিল?
এখনও পর্যন্ত এইসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর খুঁজে পাননি গবেষকরা। তবে তাঁদের প্রাথমিক অনুমান, প্রাচীনকালে শেষকৃত্যের রীতি-রেওয়াজে ব্যবহৃত হত এই পাত্রগুলি। দেহের অবশিষ্টাংশ কিংবা চিতাভস্ম এই পাত্রে বন্দি করেই সমাধিস্থ করতেন সেইসময়ের মানুষরা। অধিকাংশ পাত্রইই খালি অবস্থায় পাওয়া গেলেও, গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সেগুলির মুখ ঢাকা ছিল পাথরের ঢাকনা দিয়ে। বিষয়টির সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে খননকার্য শুরু করা হবে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।
আরও পড়ুন
গত এক শতকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ব্রিটেনে
এর আগে লাওস এবং ইন্দোনেশিয়ায় এই একই ধরনের প্রস্তরপাত্রের সন্ধান মিলেছিল। উল্লেখ্য সেগুলিও অনেকটা একইরকম ভঙ্গিতে সমাধিস্থ ছিল মাটির মধ্যে। ফলত, আসামে সদ্য-আবিষ্কৃত পাত্রগুলির সঙ্গে বৈদেশিক সংস্কৃতির যোগ থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গবেষকরা…
আরও পড়ুন
৩২০০ বছরের প্রাচীন শস্যপাত্র আবিষ্কার, বদলাতে পারে দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
একই গাছে পাঁচবার ধানের ফলন! অভিনব আবিষ্কার বাংলাদেশের বিজ্ঞানীর