অগ্নিগর্ভ মায়ানমার, ‘ঢাল’ নিয়ে পথে সাধারণ মানুষ

ফুট চারেক লম্বা আয়তকার ঢাল। তার গায়ে আঁকা তিনটি আঙুল উঁচিয়ে রাখা হাত, প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক। সেইসঙ্গে বড়ো হাতের ইংরাজি অক্ষরে লেখা ‘পিপল’। নিচে বেশ কয়েকটি গুলির দাগ। এই ঢাল নিয়েই গতকাল মায়ানমারের রাস্তায় নামলেন সাধারণ মানুষ। এমনই অভিনব এক দৃশ্য দেখা গেল মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের পথে। শুধু বিরোধিতার প্রতীকই নয়, মায়ানমার পুলিশ ও সেনানীর সহিংসতা থেকে বাঁচতেও এই কৌশল বেছে নিলেন অবস্থানকারীরা।

তবে মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়েছিল এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল। তারপরেই পুলিশের কার্যকলাপ ছত্রভঙ্গ করে দেয় অবস্থান। তা সত্ত্বেও রাবার বুলেট, জল কামান, টিয়ার গ্যাসের বিরুদ্ধে ঢাল হাতে নিয়েই চলল বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ। 

শুধু তাই নয়, রক্তক্ষয়ও কম হয়নি। অভ্যুত্থানের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন ৬০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অধ্যাপক ও সু কি’র ন্যাশনাল লিগের সদ্দদস্য জাও ম্যাট লিনের মৃত্যু সাড়া ফেলে দেয় মায়ানমারে। চলতি সপ্তাহে সন্ধের পরেই পুলিশি টহল এবং খানাতল্লাশি চলছে মায়ানমার জুড়ে। প্রতি বাড়িতে অনুপ্রবেশ করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিক্ষোভকারীকে। 

গত সোমবার রাতের বেলায় অধ্যাপক জাও ম্যাটের বাড়িতে হানা দিয়েছিল পুলিশ। পালানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি কোনো। গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল তাঁকে। পরদিন হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় মায়ানমার পুলিশ। তবে জানানো হয়নি মৃত্যুর কারণ। সেনা-হাসপাতাল থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে খবর পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন
মায়ানমারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে ঝাঁঝরা ১৮ বিক্ষোভকারী, বিশৃঙ্খলা চরমে

এই ঘটনা যেন আরও উজ্জীবিত করে তোলে প্রতিবাদকে। ‘ঢাল’ নিয়ে রাস্তায় নামার পাশাপাশি মঙ্গলবার রাতে ইয়াঙ্গুনে প্রায় ২০ জনের পুলিশ বাহিনী টহল দেওয়ার সময় হঠাৎই কার্ফিউ ভেঙে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন স্থানীয়রা। সমবেত সঙ্গীত গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের পাত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম বাজিয়েও প্রতিবাদ করেন তাঁরা। নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড লাইভ গুলিও চালায় পুলিশ। 

ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর নিস্তার পায়নি মায়ানমারের সংবাদমাধ্যমের অফিসও। সংবাদমাধ্যম ‘কমায়ুত মিডিয়া’-র অফিসে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় সহ-প্রতিষ্ঠাতা হান থার নাইন এবং প্রধান সম্পাদক নাথান মংকে। চলে ভাঙচুর। বাজেয়াপ্ত করা হয় ব্রডকাস্টিংয়ের সমস্ত সরঞ্জাম। 

আরও পড়ুন
প্রতিবাদ রুখতে নতুন আইন মায়ানমারে, হতে পারে ২০ বছরের কারাদণ্ড

পাশাপাশি মায়ানমারের জনপ্রিয় পাঁচটি সংবাদমাধ্যমের লাইসেন্সও বাতিল করে দেয় ক্ষমতাসীন সরকার। যদিও ‘ডেমোক্রটিক ভয়েস অফ বর্মা’ জানিয়েছে, স্যাটালাইট টেলিভিশন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ছবি। পাশে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক প্রেস ইনস্টিটিউট। সংবাদমাধ্যমের অনুমতি বাতিলকরণ নিয়ে কড়া ভাষা নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

তবে এতকিছুর পরেও ঠেকিয়ে রাখা যাবে না প্রতিবাদকে, সেই বার্তাই দিচ্ছেন মায়ানমারের সাধারণ মানুষ। স্পষ্ট করে দিচ্ছেন, এই অভ্যুত্থান এবং সহিংসতার ‘ঢাল’ হিসাবে অনড় থাকবেন তাঁরা…

আরও পড়ুন
সু কি’র মুক্তির দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ মায়ানমারে, শাসকের অস্ত্র জলকামান-রাসায়নিক

Powered by Froala Editor