মাস কয়েক আগেই সামরিক অভিযানের মাধ্যমেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল অফিস। ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছিল সমস্ত যন্ত্রপাতি। কিন্তু তারপরেও ‘আইনের’ সীমানা লঙ্ঘন করে ক্রমাগত সাংবাদিকতা চালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। বাস্তব পরিস্থিতির ছবি তুলে ধরেছিলেন দেশের নাগরিকদের কাছে। এবার সেই দোষেই সশ্রম কারাদণ্ডের দণ্ডিত হতে হলে মায়ানমারের দুই সাংবাদিককে।
‘ডেমোক্র্যাটিক ভয়েস অফ বার্মা’-র সাংবাদিক আং কিয়াও এবং মায়ানমারের অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ‘মিজিমা’-র সংবাদদাতা জাও জাওকে বুধবার দক্ষিণ মায়ানমারের একটি সেনা আদালত দোষী সাব্যস্ত করে। জুন্টা শাসকের অভিমত ‘ভুয়ো খবর’ প্রচার করে অশান্তি ছড়ানোর কারণেই এই শাস্তি পেতে হয়েছে তাঁদের। যদিও দুই সাংবাদিকের পরিবার এবং সংবাদমাধ্যম দুটির অধিকর্তা বলছেন অন্য কথা। এই শাস্তি আসলে স্বৈরাচারী শাসকের বিরোধিতা করারই ফলাফল। গত মার্চ মাসেই এই দুই সংবাদমাধ্যমের একাধিক আউটলেট সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল মায়ানমারের সেনা। বাতিল করা হয়েছিল পাঁচটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের লাইসেন্সও।
তবে এই প্রথম নয়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জুন্টা শাসক। গ্রেপ্তার হয়েছেন কমপক্ষে ৯০ জন সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি এখনও বন্দি মায়ানমারের কারাগারে। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুই মার্কিন সাংবাদিকও।
তবে এবার বর্বরতার সকল উদাহরণকেই ছাপিয়ে গেল মায়ানমার। দুই সাংবাদিককে দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যবহৃত হল ঔপনিবেশিক আইন। যা নজিরবিহীন বলাই চলে। এমনকি বিচারের সময়, দুই অভিযুক্ত সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যদেরও উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি ট্রায়ালে। বিচারের পর মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য শুধু পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের।
আরও পড়ুন
আর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়; হাতে বন্দুক তুলে নিলেন মায়ানমারের ‘বিউটি কুইন’
যদিও দুই সাংবাদিক সেনা আদালতে মুক্তির জন্য আবেদন করেননি। সামরিক শাসনের অধীনস্থ কোনো আইনেই বিশ্বাস নেই তাঁদের, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তবে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছে মায়ানমারের দুই সংবাদমাধ্যমই। ধিক্কার জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-ও। জুন্টা শাসকের এই ‘সিদ্ধান্ত’কে ‘রাজনৈতিক’ হিসাবেই অভিহিত করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন
স্বৈরাচারের প্রতিবাদ করায় কবিকে নির্মম হত্যা মায়ানমারে
কিন্তু এভাবেই কি ঠেকিয়ে রাখা যাবে দেশের পরিস্থিতি? ক্রমশ বৃহত্তর সংঘাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে মায়ানমার। এমনকি আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সেখানে। আর সেই পথটা আরও প্রশস্ত করে দিচ্ছে স্বৈরশাসকের এই ধরনের পদক্ষেপই…
আরও পড়ুন
মায়ানমার ‘গণহত্যাকারী’, অলিম্পিকে বহিষ্কারের দাবি সে-দেশেরই সাঁতারুর
Powered by Froala Editor