বিভিন্ন প্রদেশে একাধিক গণহত্যা চালিয়েছে মায়ানমারের সেনা, মিলল প্রমাণ

চলতি বছরের একেবারে শুরুর দিকের কথা। দিনটা ছিল ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ। মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন সে-দেশের রাষ্ট্রপতি আং সু কি। সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান এবং গণতন্ত্রপতনের প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল গোটা রাষ্ট্র। স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ অবস্থানের পথ বেছে নিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ। আর, তারপরই শুরু হয়েছিল বার্মিজ জুন্টা স্বৈরশাসকের অমানবিক নৃশংসতা। জায়গায় জায়গায় সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। কখনো আবার বোমারু বিমান নিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল দেশেরই নাগরিকদের ওপর। সব মিলিয়ে প্রথম চার মাসের মধ্যেই মৃত্যুর পরিসংখ্যান ছাড়িয়েছিল হাজারের গণ্ডি। এবার গণহত্যারও (Genocide) সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলল মায়ানমারে (Myanmar)।

মায়ানমায়ের একাধিক গ্রামে গণহত্যা পরিকল্পিত গণহত্যা ঘটানো হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছিল অনেক আগেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল বেশ কিছু মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করা ভিডিও ফুটেজ। তবে সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি তাদের। তার কারণ, গোটা বিশ্বের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সমস্ত যোগাযোগের মাধ্যমই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল জুন্টা শাসক। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ইন্টারনেট। এমনকি দেশের বেসরকারি সমস্ত সংবাদ মাধ্যমকে নিষিদ্ধ করেছিল সামরিক শাসক। এবার বিবিসির তদন্তমূলক প্রতিবেদনে উঠে এল মায়ানমারের বাস্তব পরিস্থিতির ছবি। 


রেবেকা হান্সকে, কেলভিন ব্রাউন এবং কো কো আং— বিগত কয়েকমাস ধরে মায়ানমারের প্রান্তিক বিভিন্ন গ্রামে অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন বিবিসির এই তিন সাংবাদিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী এবং অত্যাচারিত মানুষদের। আশ্চর্যজনকভাবেই তাঁদের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায় পূর্বপ্রকাশিত ভিডিও ফুটেজের দৃশ্যগুলি। সামরিক বাহিনীর ঘেরাটোপে মায়ানমারের অন্যান্য শহর থেকে এই সমস্ত অঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে সম্পূর্ণভাবে। পাশাপাশি প্রযুক্তির সুবিধাও সেখানে নেই বললেই চলে। ফলে, এই সমস্ত বর্ণনা যে মনগড়া বা পূর্বপরিকল্পিত নয়, তাও নিশ্চিত একপ্রকার। 

আরও পড়ুন
পশ্চিমবঙ্গে দেখা নেই ইলিশের, পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশ ও মায়ানমারে, কেন?

বলতে গেলে, জুন্টার শাসকদের নৃশংসতা যেন ছাপিয়ে গেছে ঔপনিবেশিক সময়ের ইতিহাসকেও। দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে ইট, পাথর ছুঁড়ে এবং বন্দুকের বাটের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে বহু মানুষকে। যা হুবহু মিলে যায় দু’দশক আগের তালিবান শাসনের সঙ্গে। শুধু মধ্য-মায়ানমারের প্রান্তিক গ্রাম কানিতেই হত্যা করা হয়েছে ৪০ জন মানুষকে। যাদের মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী এবং নাবালকরাও। একই ছবি ডি বিন জুইন গ্রামেও। সেখানেও ১৭ জন ব্যক্তিকে একই সঙ্গে হত্যা করা হয়েছে নৃশংস অত্যাচার করার পর। অপরাধ, গেরিলা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণে সাহায্য করা। সংশ্লিষ্ট গ্রামে অত্যাচারিত ও মৃতদের গণকবরও আবিষ্কার করেছেন বিবিসির সাংবাদিকরা। খুঁজে পাওয়া গেছে বিকৃত ১২টি মৃতদেহ। 

আরও পড়ুন
মায়ানমারকে আর আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি নয়, নিষেধাজ্ঞা জারি রাষ্ট্রপুঞ্জের

সম্প্রতি, মায়ানমারের উপমন্ত্রী এবং সামরিক মুখপাত্র জেনারেল জাও মিনের কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে বিবিসি। আশ্চর্যজনকভাবেই সেনাবাহিনীর এই কর্মকাণ্ডকে স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। সাফাই গেয়েছেন, দেশের সরকারের সুরক্ষার জন্যই এই পন্থা অবলম্বন করেছে সামরিক বাহিনী। বেশ কয়েক মাস ধরেই মায়ানমার শাসকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। একাধিক প্রথম বিশ্বের দেশ বাণিজ্যিক সম্পর্কে ইতি টানলেও, সেই মতো কোনো কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেয়নি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে। এখন দেখার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেশ করার পর, এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে আদৌ কোনো আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা…

আরও পড়ুন
সেনাবাহিনীর আক্রমণে বাস্তুচ্যুত ১ লাখ, গণমৃত্যুর প্রহর গুনছে মায়ানমার

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More