বছর আটেক আগের কথা। ২০১৩ সালে প্রথমবারের জন্য থাইল্যান্ডে আয়োজিত হয়েছিল ‘মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিযোগিতা। অংশগ্রহণ করেছিলেন সব মিলিয়ে ৬০টি দেশের প্রতিযোগী। সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন বার্জিম তরুণী টার টেট টেট। সকলকে চমকে দিয়েই ‘বিউটি কুইন’-এর মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছিলেন মায়ানমারের এই জিমনাস্টিক প্রশিক্ষক। এবার জুন্টা শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সামিল হলেন তিনি। হাতে তুলে নিলেন আগ্নেয়াস্ত্র।
সম্প্রতি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেন টার। হাতে প্রসাধনী সামগ্রী নয়, বদলে হুংকার দিচ্ছে অ্যাসল্ট রাইফেল। পরনে কালো পোশাক। মাথায় টুপি। মায়ানমারের একদা বিউটি কুইনই এখন সেখানকার গেরিলা যোদ্ধা।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই সামরিক শাসন চলছে মায়ানমারে। গ্রেপ্তার হয়েছেন নির্বাচিত প্রধান আন সু কি। সেনা অভ্যুত্থানের শুরু থেকেই জুন্টা শাসকদের প্রতিবাদে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছিলেন হাজার হাজার মায়ানমারবাসী। চলছিল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ। এখনও সেই প্রতিবাদ অব্যাহত। কিন্তু তাতে কি লাভ হচ্ছে আদৌ? উল্টে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রতিনিয়তই মারা যাচ্ছেন বহু মানুষ। সাড়ে সাতশো ছাড়িয়েছে নিহতের সংখ্যা। যাঁরা বন্দি হচ্ছেন, তাঁদের ওপরেও চলছে অকথ্য অত্যাচার।
শুরু থেকেই জুন্টা শাসনের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন টার। তবে কতদিন আর মুখ বুজে সহ্য করে নেওয়া যায় হত্যালীলা? অবশেষে ভেঙেছে ধৈর্যের বাঁধ। এবার সশস্ত্র আন্দোলনের পথেই তাই হাঁটলেন তিনি।
আরও পড়ুন
স্বৈরাচারের প্রতিবাদ করায় কবিকে নির্মম হত্যা মায়ানমারে
ফেসবুক পেজেও একটি পোস্টের মাধ্যমে তিনি অনুরাগীদের আহ্বান জানান প্রতিবাদে সামিল হতে। সশস্ত্র পথ না বেছে নিলেও প্রত্যেকে যেন নিজের মতো করে এই আন্দোলনে যোগ দেন, সেই অনুরোধই করেছেন তিনি। গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইয়ে অর্থদানের কথাও উল্লেখ করেছেন টার। অভিমত, একমাত্র সমবেত প্রতিবাদই এই নরকযাপনের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে পারে গণতন্ত্র। পাশাপাশি এও জানিয়েছেন, সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে তিনি লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। তাতে জীবন দিতে হলেও পিছপা নন তিনি।
আরও পড়ুন
মায়ানমার ‘গণহত্যাকারী’, অলিম্পিকে বহিষ্কারের দাবি সে-দেশেরই সাঁতারুর
টারের এই সাহসী পদক্ষেপে মুগ্ধ গোটা দুনিয়া। রীতিমতো সাড়া পড়ে গেছে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টেও। তাঁর মতো এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের আহ্বানে যে অনেকেই এগিয়ে আসবেন, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। আর সেই কারণেই হয়তো বহু আগে থেকেই সমাজের বুদ্ধিজীবী ও প্রভাবশালী মহলকে ভয় পেয়েছিল জুন্টা শাসক। ‘হিটলিস্ট’-এ তালিকাভুক্ত করেছিল তাঁদের নাম। গতকালই জুন্টা শাসকদের হাতে নিহত হয়েছেন খ্যাতনামা বার্মিজ কবি খেত থি। তবে তারপরেও কণ্ঠরোধ করা গেল না প্রতিবাদের। বরং নিজের মতো পথ খুঁজে নিল বিপ্লব…
আরও পড়ুন
আশিয়ানের বৈঠকেও অনুচ্চারিত রাজবন্দিদের মুক্তি-প্রসঙ্গ, ক্ষুব্ধ মায়ানমারের নাগরিকরা
Powered by Froala Editor