পুজোর মধ্যেও উঠে আসছে সাম্প্রদায়িক বিতণ্ডার একের পর এক খবর। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘এ বড়ো সুখের সময় নয়’। তবু, এসবের মধ্যেও কিছু-কিছু ঘটনা আশা জাগায়। আবহমান পড়শি হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতির কথাই সদর্পে ঘোষণা করে সেইসব ছবি। আর আমরা যারা শান্তি চাই, সমস্ত ভেদাভেদের ঊর্দ্ধে মানুষের সমাজ চাই যারা, তাদের কাছে পুজোর উপহার হয়ে আসে সেসব। এমনই এক উদাহরণ খিদিরপুরের মুন্সীগঞ্জ।
এলাকাটিতে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরই সংখ্যা বেশি। হাতে গোনা কয়েকটি হিন্দু পরিবার বাস করেন সেখানে। তবে দুর্গাপুজোয় বাধা পড়েনি তাতে। মুন্সীগঞ্জের ফাইভ স্টার ক্লাবের পুজোর মূল কাণ্ডারী স্থানীয় মুসলমানরাই।
শোনা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশেপাশের সময়ে বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে শ্রমিকরা এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। তখনই শুরু এই দুর্গাপুজোর। বয়স বেড়েছে আস্তে আস্তে। এখন আর হিন্দু-মুসলমান ভেদ করেন না কেউই। মুসলমান মহিলাদের দায়িত্বে পুজোর কাজকর্ম, দশমীতে দেবীকে বরণ, যোগাড় ইত্যাদি। ধর্ম সরিয়ে রেখে একত্রিত হওয়ার নামই যে দুর্গাপুজো, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ খিদিরপুরের এই পুজো।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কমছে পুজোর বাজেট। কিন্তু পুজো থামানোর পক্ষপাতী নন স্থানীয় মুসলমানরা। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলি থেকে চাঁদা তোলা হয় বছরে একবারই। সেই চাঁদা থেকেই ভাগ করে হয় দুর্গাপুজো, ঈদ, মহরমের আয়োজন।
‘ঈশ্বর আল্লা তেঁরো নাম’ – শুনতে পছন্দ করতেন মহাত্মা গান্ধী। আজ তাঁকেও ‘দেশদ্রোহী’ বলছেন কেউ কেউ। এহেন পরিস্থিতিতে, খিদিরপুরের এই ঘটনা যে নিছক খণ্ডচিত্র নয়, বরং আরও বড় এক নজিরের সামনে নিয়ে যায় আমাদের – তাতে আর সন্দেহ কী!