উৎসবের কাছে ধর্মীয় ভেদাভেদ তুচ্ছ। এই কথারই যেন হুবহু প্রতিফলন আগরতলার বিতরবন অঞ্চলের দুর্গা পুজোয়। ত্রিপুরার ‘তোলার মাঠ’-এর এই পুজোয় নামাজের সুরের সঙ্গে মিশে গেছে ঢাকের বাদ্যি, চণ্ডীপাঠ। কাঁধ কাঁধ মিলিয়েই দেবীর আয়োজনে সেখানে হাত মেলান হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের মানুষেরা।
পুজোয় জাঁকজমক নেই একেবারেই। মণ্ডপসজ্জাও সাধারণ। যা আছে, তা হল ভক্তি। আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার অঙ্গীকার। দরিদ্র জনবসতি থেকে কীভাবে জোগাড়ই বা হবে অত টাকা? জোর-জুলুম নেই কোনো। তবে এলাকাবাসীরা নিজেরাই নিজেদের মতো সামান্য অর্থ সাহায্য পৌঁছে দেন কমিটির কাছে। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে। পুজো কমিটির সভাপতি রহিম মিয়াঁ স্বয়ং একজন ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষ। তবুও আয়োজনে এতটুকু খামতি রাখেন না তিনি।
আজ ১৯ বছর ধরেই চলছে এই দেবী আরাধনা। তবে এই একই মাঠে ঈদের নামাজ পড়াও হয়। আঞ্চলিক হিন্দুরাও সেখানে অংশ নেন তত্ত্বাবধানে। সাহায্য করেন ইসলাম ধর্মালম্বীদের। বিবাহ অনুষ্ঠানেও এই একইভাবে অংশ নেন তাঁরা। শ্মশান আর কবরস্থানের আলাদা অর্থ নেই আর এই অঞ্চলে। আছে এক গভীর আত্মীয়তা। অন্য ধর্মের পাড়া-প্রতিবেশীর মৃত্যুর খবর আসলে তাই শুধু ছুটে যাওয়া আছে।
সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে হিংসার বাতাবরণ। বারবার প্রকট হচ্ছে বর্ণবৈষম্য। সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ত্রিপুরার এই ছোট্ট পুজো বার্তা দেয় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। একে অপরের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যেন এক অনন্য রূপ। ভেদাভেদ মুছে দেওয়ার একমাত্র রাস্তাই যে মানবিকতা, তাই চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় এই দুর্গোৎসব...
Powered by Froala Editor