আসতে অস্বীকার ছেলের, মৃত বৃদ্ধের দাহকর্মের দায়িত্ব নিলেন মুসলিম যুবক

লকডাউনের এই কঠিন সময় আমাদের সামনে মানবিকতার একাধিক দৃশ্য তুলে এনেছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়েও প্রবলভাবে বেঁচে আছে সম্প্রীতি, মনুষ্যত্ব। আর তাই জাতি, ধর্ম ভুলেই বিনা দ্বিধায় এক হিন্দু ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকারেই এগিয়ে এলেন স্থানীয় মুসলমানরা। মহারাষ্ট্রের এই ঘটনা প্রমাণ দিল তারই। 

বছর আটাত্তরের ওই ব্যক্তি স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতেন মহারাষ্ট্রের আকোলা এলাকায়। ছেলে থাকেন নাগপুরে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে ছেয়ে গেছে মহারাষ্ট্র। এই ছায়া থেকে বাদ পড়েননি ওই ব্যক্তির স্ত্রীও। গত ২৩ মে কোভিড১৯-এর লক্ষণ দেখা যাওয়ায়, আকোলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে যায় আরেক অঘটন। সেদিনই সন্ধেবেলায় হৃদরোগে মারা যান ওই ব্যক্তি। পরের দিন পজিটিভ আসে তাঁর স্ত্রীয়ের কোভিড১৯ রিপোর্ট। নাগপুরে তাঁর ছেলের কাছে মৃত্যুসংবাদ পৌঁছালে অন্তিম সৎকারে আসতে অস্বীকার করেন তিনি।

করোনা আতঙ্কে শেষকৃত্যে আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীরা এগিয়ে না এলেও, দায়িত্ব নিলেন স্থানীয় মুসলমান যুবক। ওই অঞ্চলে বেশ কিছু মুসলমান যুবকের পরিচালনায় গঠিত হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আকোলা কুতছি মেমন জামাত। করোনার আবহে যে সকল পরিবারের সৎকারের সামর্থ্য নেই, তাদের সাহায্য করছে এই সংস্থা। তাঁদের তত্ত্বাবধানেই হিন্দু রীতি মেনেই সৎকার হয় ওই ব্যক্তির। 

এখনো পর্যন্ত ওই সংস্থা মোট ৬০ জনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। যার মধ্যে ২১ জন কোভিড১৯ রোগী। রয়েছেন ৫ জন হিন্দুও। সরকারি স্যানিটাইজেশন বিভাগের প্রধান আধিকারিক রাজকুমার জানান, স্বেচ্ছাসেবীরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পোশাক পরেই এই কাজে অংশ নিচ্ছেন। রবিবার নিজে উপস্থিতি না থাকলেও ওই বৃদ্ধের শেষকৃত্যের জন্য ৫০০০ হাজার টাকা সাহায্য হিসাবে পাঠান তিনি।

যে-কোনো বিষয়ে বৈপরীত্য তো থাকেই। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি। ওই বৃদ্ধের সৎকারের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছেন বেশ কিছু আঞ্চলিক মানুষ। সংবাদ মাধ্যমে ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিবেশীরা এবং ওই ব্যক্তির ছেলেও। তবে এসব ছাপিয়েই অস্থির এই সময়ে উজ্জ্বল হয়ে আছে মহানুভবতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। প্রতি পদে পদে ভরসা যোগাচ্ছে আমাদের, জয় আসবেই। মনে করিয়ে দিচ্ছে, ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’...

Powered by Froala Editor

More From Author See More