দর্শকদের সামনেই মৃত্যু, গাইতে গাইতেই প্রাণ হারিয়েছেন যে-সব শিল্পী

/১০

পেরিয়ে গেছে ১৮ ঘণ্টা। তবে সঙ্গীতশিল্পী কেকে-র প্রয়াণে এখনও শোকস্তব্ধ মহানগরী। গতকাল মঞ্চে গান গাইতে গাইতেই অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল তাঁর মধ্যে। বার বার উল্লেখ করেন, গরম লাগছে তাঁর। অনুষ্ঠানের খানিক পরেই আকস্মিক মৃত্যু— এই সমীকরণকে মেনে নিতে পারছেন না কেউ-ই। বিশ্বের ইতিহাসে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে এর আগেও। এমনকি দর্শকদের সামনে সঙ্গীত পরিবেশন করতে করতেই বিদায় নিয়েছেন বহু সঙ্গীততারকা। এক ঝলক ফিরে দেখা যাক সেইসব ব্যক্তিত্বদের।

/১০

এডাভা বশীর— গত ২৮ মে-র কথা। অন্যান্য দিনের মতোই মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। গলা মিলিয়েছিলেন অর্কেস্ট্রার তালে। তবে সেই গান আর শেষ করা হয়ে ওঠেনি তাঁর। মঞ্চেই বসে পড়েন তিনি। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় কেরলের জনপ্রিয় মালয়ালি গায়ককে। মূলত ভক্তিগীতির জন্যই দক্ষিণে জনপ্রিয় তিনি। গান পরিবেশন করতেন মন্দির ও মসজিদ— উভয় জায়গাতেই। হয়ে উঠেছিলেন সম্প্রীতির প্রতীক। বশীরের এই অকালপ্রয়াণের পর কলকাতাতেও এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, তা কে-ই বা জানত!

/১০

মার্ক স্যান্ডম্যান— আমেরিকান লো রক ব্যান্ড মরফিনের জনপ্রিয়তার নেপথ্যে ছিলেন ব্যান্ডের ফ্রন্টম্যান মার্ক স্যান্ডম্যান। তাঁর আইকনিক কণ্ঠস্বর এবং দুই তারের বেস-ই সমকালীন মার্কিন শিল্পীদের থেকে পৃথক করে তুলেছিল তাঁকে। ১৯৯৯ সালের ৩ জুলাই রোমে একটি কনসার্টের সময় স্টেজেই মাথা ঘুরে পড়ে যান মার্ক। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় তাঁকে। স্যান্ডম্যানের মৃত্যুর পর ভেঙে যায় ‘মরফিন’-ও।

/১০

ড্যারেল ডাইমবাগ— নব্বইয়ের দশকে মেটাল সঙ্গীতের জগতে অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিল ‘প্যান্টেরা’ ব্যান্ডের গিটারবাদক ড্যারেল ডাইমবাগ। ‘প্যান্টেরা’ ভেঙে যাওয়ার পর ‘ড্যামেজপ্ল্যান’ নামে আরও একটি রক ব্যান্ড তৈরি করেছিলেন ড্যারেল। ২০০৪ সালের ৪ ডিসেম্বর এই ব্যান্ডের কনসার্টের সময়ই মৃত্যু হয় ডাইমবাগের। ওয়াহোর কলম্বাস ভিলার মঞ্চে সেদিন গান শুরু হওয়ার ৯০ সেকেন্ডের মাথায় বন্দুক নিয়ে আক্রমণ চালান নাথান গেল নামে এক ব্যক্তি। গুলিতে ডাইমবাগ ছাড়াও মারা গিয়েছিলেন আরও চারজন। অন্যদিকে পুলিশের গুলিতে মারা যান নাথান নিজেও।

/১০

ব্রুস হ্যাম্পটন— ‘গ্র্যান্ডফাদার অফ জ্যাম ব্যান্ড সিন’— পাশ্চাত্য সঙ্গীতমহলে এই নামেই পরিচিত ছিলেন হ্যাম্পটন। কোয়ার্ক অ্যালায়েন্স, লেট ব্রোঞ্জ এজ, হ্যাম্পটন গ্রিস-সহ একাধিক জ্যাম ব্যান্ডে রাজত্ব করেছেন ব্রুস। ২০৭১৭ সালের মে মাসে আটলান্টার ঐতিহাসিক ফক্স থিয়েটারে বিশেষ কনসার্ট আয়োজন করা হয়েছিল হ্যাম্পটনের ৭০ বছরের জন্মদিন উপলক্ষে। অলস্টার জ্যাম সেশনে সেদিন হাজির ছিলেন বহু রক অ্যান্ড রোল এবং ব্লুজ শিল্পী। অনুষ্ঠান চলাকালীন হঠাৎই স্টেজে হাঁটু মুড়ে বসে পড়েন হ্যাম্পটন। সকলে ভেবেছিলেন হয়তো, ধন্যবাদ দিচ্ছেন তিনি। তবে একটু পরেই পরিষ্কার হয়ে যায় বিষয়টা। মেডিক্যাল টিম মৃত বলে ঘোষণা করে তাঁকে।

/১০

ইরমা বুলে— আজকে ভারতজুড়ে পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যান্ডদের রমরমা। জনপ্রিয়তার শীর্ষেই বিটিএস। যে উন্মত্ততা ছিল না বছর পাঁচেক আগেও। স্বাভাবিকভাবেই তাই নামটা একটু অপরিচিত ঠেকার কথা। না, হৃদরোগ কিংবা আততায়ীর গুলি নয়, ইরমা মারা যান সাপের কামড়ে। কেরিয়ারের শুরু থেকেই ২৯ বছর বয়সি গায়িকার স্টেজসঙ্গী ছিল একটি কিং কোবরা। স্টেজ প্রপ হিসাবেই সেটি ব্যবহার করতেন তিনি। অবশ্য তার বিষ বার করে নেওয়া হত আগেই। কারাওয়াং-এর একটি কনসার্টে গান গাওয়ার সময় এই সাপই কামড় বসায় তার ঊরুতে। তার ঠিক ৪৫ মিনিটের মাথায় স্টেজের মধ্যেই মৃত্যু হয় ইরমার।

/১০

লেস হার্ভি— মিঠুনের ডিসকো ড্যান্সার সিনেমার কথা মনে আছে? ইলেকট্রিক গিটার স্পর্শ করে ৫০০০ ভোল্টের শকে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর অভিনীত চরিত্র ‘জিমি’-র মায়ের। এই দৃশ্যই বাস্তবে পরিণত হয়েছিল লেস হার্ভির ক্ষেত্রে। ওয়েলসের সোয়ানসি-তে একটি কনসার্টে গান গাইতে গিয়েছিলেন হার্ভি। তখনও শুরু হয়নি কনসার্ট। হাজার খানেক দর্শকের সামনে তখন গিটার এবং মাইক্রোফোনের সাউন্ড চেক করছিলেন রক ব্যান্ড ‘স্টোন দ্য ক্রোস’-এর গিটারিস্ট। তবে মাইক্রোফোন স্পর্শ করার পরেই ঘটে যায় বিপত্তি। আর্থিং-এর সমস্যার জন্য প্রায় ১৬০০ ভোল্টের শক খান হার্ভি। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

/১০

ম্যাঙ্গো— জিউসেপ ‘পিনো’ ম্যাঙ্গো। ইতালির অন্যতম সেরা গায়ক হিসাবেই বিবেচনা করা হয় তাঁকে। ইতালির ভূমধ্যসাগরীয় পপ সঙ্গীতকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন ম্যাঙ্গো। মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন পপ এবং কান্ট্রি মিউজিকের। ম্যাঙ্গো-র মৃত্যুও বেশ অবাক করাই। মঞ্চে গান গাইতে গাইতে হঠাৎ থেমে ‘এক্সকিউজ মি’ বলে শ্রোতাদের দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মাইক্রোফোন। ঠিক তার পরমুহূর্তেই স্টেজে পড়ে যান তিনি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় তাঁকে।

/১০

জনি ওয়াটসন— সত্তরের দশকে বিশ্বকে ফাঙ্ক মিউজিকের স্বাদ দিয়েছিলেন জনি ওয়াটসন। অবশ্য তিনি সকলের কাছে পরিচিত ‘গিটার’ ডাকনামেই। সত্তর-আশির দশকে আর-অ্যান্ড-বি চার্টের শীর্ষে ধারাবাহিকভাবে জায়গা করে নিয়েছিল তাঁর ব্লুজ গান। ১৯৯৬ সালে জাপানের ইয়োকোহামায় একটি গিগে আকস্মিক মৃত্যু হয় তাঁর। স্টেজে উঠে দর্শকদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা বলতে বলতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাতে ধরা ছিল গিটার। সেদিন আর কোনো বেজে ওঠা হয়নি তার।

১০/১০

এখানেই এই তালিকার শেষ নয়। গোটা বিশ্বজুড়েই এহেন বহু খ্যাতনামা সঙ্গীতশিল্পী ছড়িয়ে রয়েছেন যারা শিকার হয়েছেন এমনই আকস্মিক অকালমৃত্যুর। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন কেকে। জীবন যে কতটা আকস্মিক, তারই প্রত্যক্ষ উদাহরণ এই সকল ব্যক্তিত্বদের আকস্মিক প্রয়াণ…

Powered by Froala Editor

More From Author See More