শিল্পের প্রতিটি মাধ্যম তো একে অপরকে আশ্রয় করেই বেঁচে থাকে। আর সেই দুই মাধ্যম যদি হয় থিয়েটার এবং চিত্রশিল্প হয়, তাহলে তো কথাই নেই। যদিও একটি কাহিনিকে নিয়েই মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার, কিন্তু তার দৃশ্যায়ন তো একধরণের বাস্তব ছবিকেই তুলে ধরে। আবার চিত্রশিল্পের মধ্যেও তো থাকে অসংখ্য কাহিনি, ইতিহাস এবং রহস্য। তবে সেসব কাহিনির মঞ্চায়ন সেভাবে ঘটতে দেখা যায় না। কিন্তু এবার আমেরিকার মঞ্চে আসতে চলেছে তেমনই এক ব্যাতিক্রমী প্রযোজনা। আর সেই প্রযোজনার বিষয়বস্তু মাত্র একটি ছবি। চিত্রশিল্পের ইতিহাসে এতোদিনের সবচেয়ে দামি ছবি। লিয়োনার্দো দা ভিঞ্চির ‘সালভেটর মুন্ডি’।
মাত্র ২৬ ইঞ্চি দৈর্ঘের একটি কাঠের প্যানেলে আঁকা যিশুখ্রিস্টের একটি প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। এই ছবিটি এঁকেছিলেন ফ্রান্সের সম্রাট দ্বাদশ লুইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়। যিশুর অনেক ছবিই অবশ্য শিল্পী এঁকেছিলেন। কিন্তু এই একটি ছবি যেন অনেক রহস্যের কুয়াশায় ঢাকা। ঠিক যেন যিশুর হাতের স্বচ্ছ বর্তুলের মতো। সেই বর্তুলের ছবি আজও বিশেষজ্ঞদের অবাক করে। হঠাৎ দেখে তেমন কিছু মনে হয় না। কিন্তু একটু ভালোভাবে দেখলে বোঝা যায়, কাঁচের বর্তুল হাতে নিয়ে দাঁড়ালে তার ভিতর দিয়ে আলোর যে প্রতিসরণ ঘটে, তার কোনো চিহ্ন নেই ছবিতে। ভিঞ্চির মতো বাস্তববাদী শিল্পীও কি তাহলে এখানে ভুল করলেন? নাকি এর মধ্যে আছে অন্য কোনো রহস্য?
তবে ছবিটিকে নিয়ে রহস্যের এখানেই শেষ নয়। এই কিছুদিন আগে পর্যন্তও মনে করা হত ভিঞ্চির মূল ছবিটা কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। আর তার বদলে যেটা আছে সেটা কোনো অপটু অনুকরণ শিল্পীর আঁকা। আর তার ফলে কোনোদিনই তেমন দাম পায়নি ছবিটি। ২০০৫ সালে একটি নিলামে ছবিটি বিক্রি হয় মাত্র ১০ হাজার ডলারে। কিন্তু এরপর ইনফ্রা-রেড পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায় বহু অপটু তুলির টান ছবির উপর থাকলেও তার নিচেই আছে ভিঞ্চির আঁকা আসল ছবিটি। আর সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার কিছু সহজ প্রযুক্তির সাহায্যেই উদ্ধার করা গেল সেই ছবি। এরপর ২০১১ সালে সেই ছবি যখন আবার নিলামে ওঠে তখন তার দাম অনেকটাই বেড়ে যায়। আর ২০১৭ সালে ব্যক্তিগত সংগ্রহের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়।
২০১৭ সালের পর অবশ্য আর সাধারণ মানুষের চোখের সামনে আসেনি ‘সালভেটর মুন্ডি’। কিন্তু তাকে নিয়ে মানুষের উৎসাহ প্রচুর। আর সেই উৎসাহের কথা মাথায় রেখেই এই ছবির কাহিনিকে থিয়েটারের মঞ্চে তুলে আনা হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন চিত্রনাট্যকার ডেবোরাহ গ্রেস ওয়াইনার। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, থিয়েটারের মাধ্যমে আসলে তুলে ধরা হবে একটি মৌলিক প্রশ্নকে। শিল্পের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ হয় কী দিয়ে? কেনই বা একই ছবির দামের মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এতটা তফাৎ হয় কেন?
আরও পড়ুন
চিত্রশিল্পীর স্মরণে মেলা, ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বাংলাদেশের গ্রামে
ওয়াইনার মনে করছেন, এইসব রহস্যের বাইরেও ছবিটির একটি মিউজিক্যাল চরিত্র আছে। ঠিক যেন শেক্সপিয়রের কোনো নাটকের মতোই নাট্যময় ছবিটি। এমন একটা কাজ যে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২২ সালের মধ্যেই নিউ ইয়র্কের এক বিখ্যাত ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল অপেরায় মঞ্চস্থ হতে চলেছে এই কাহিনি। ভিঞ্চির ছবির মতো এই থিয়েটারও কি দর্শকের মন জয় করতে পারবে?
আরও পড়ুন
নন্দলালের ছবি কি তাঁরই, কলাভবনে ফের বিতর্ক
Powered by Froala Editor