শব্দ ও ভাষা নিয়ে আস্ত জাদুঘর! কোথায়?

হাজার হাজার বছরের পুরনো প্রত্নসামগ্রী কিংবা ঐতিহাসিক নথি দেখতেই জাদুঘরে ভিড় জমায় মানুষ। আর ভাষা? প্রত্যেক ভাষার সঙ্গেও যে জড়িয়ে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে সভ্যতার মতো বিবর্তন হয়েছে তারও। তবে ভাষাই বা স্থান পাবে না কেন জাদুঘরে (Museum)? 

হ্যাঁ, শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সত্যি। বছর দুয়েক আগের কথা। ভাষা (Language) ও শব্দের (Word) ওপর ভিত্তি করেই এক অবাক করা জাদুঘরের দরজা খুলে গিয়েছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে (Washington DC)। প্ল্যানেট ওয়ার্ড (Planet Word)। না, পৃথিবীর একমাত্র ভাষা জাদুঘর নয় এটি। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশেও রয়েছে মাতৃভাষার জাদুঘর। সেখানে ভাষা আন্দোলন ও বাংলা ভাষা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি সংরক্ষিত হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে ভারতীয় বেশ কিছু ভাষা নিয়ে একইধরনের ভাষার জাদুঘর তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ-দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রকও। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই জাদুঘরের বিশেষত্ব কী?

ওয়াশিংটন ডিসির ঐতিহাসিক ফ্র্যাঙ্কলিন স্কুলের মধ্যে ৫১ হাজার বর্গফুট অঞ্চল জুড়ে তৈরি প্ল্যানেট ওয়ার্ড শুধু ভাষার সংরক্ষণই নয়, বরং স্বয়ং বাক্যালাপ করে দর্শকদের সঙ্গে। বিভিন্ন কথ্য ও লিখিত ভাষা, গান এবং শব্দ নিয়ে সারাদিনই কোনো না কোনো প্রদর্শনী চলছে সেখানে। বিনোদনের মধ্যে দিয়ে ভাষাকে আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই উদ্যোগ। 

এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় ঢুকে পড়া শব্দ, তাদের ইতিহাস, বিভিন্ন স্থানে উচ্চারণের তারতম্য— যুক্তরাষ্ট্রের এই মিউজিয়ামের গ্যালারিতে অবস্থিত ‘ওয়ার্ড ওয়াল’-খ্যাত ২২ ফুট লম্বা দেওয়ালের সামনে গেলেই নিজে কানে শোনা যাবে সেই গল্প কথা। অজস্র ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড শব্দ সংরক্ষিত রয়েছে সেখানে। রয়েছে জন কেনেডি থেকে মার্টিন লুথার, জুনিয়ারের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের বক্তৃতা শোনার উপায়ও। 

এখানেই শেষ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই জাদুঘরে কম করে হলেও জায়গা পেয়েছে শতাধিক ভাষার শব্দ। তাছাড়াও দর্শকদের বিভিন্ন দেশের ভাষা শেখারও সুযোগ করে দেয় এই মিউজিয়াম। জুলু, নাভাজো, আমহারিক, ইরানি ভাষার মতো ৩১টি ভাষার রাষ্ট্রদূতরা দায়িত্বে রয়েছেন এই বিশেষ বিভাগটির। টাং-টুইস্টার, লোকগান কিংবা মজার ছড়ার মাধ্যমেই তাঁরা তাঁদের মাতৃভাষার শিক্ষা দেন দর্শকদের। এসবের বাইরে সেখানকার রেস্তোরাঁ কিংবা গিফটশপেও ভাষার চমকপ্রদ ব্যবহার রীতিমতো মুগ্ধ করার মতোই। সবমিলিয়ে যে-কোনো ভাষাভাষীর মানুষের কাছেই এ যেন এক সব পাই-এর জগৎ। এ হেন দ্বিতীয় কোনো মিউজিয়াম পৃথিবীতে আছে কিনা, সন্দেহ রয়েছে তা নিয়ে…

Powered by Froala Editor