মিউজিয়াম একধরনের টাইম মেশিনই বটে। জাদুঘরে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক বা প্রাগৈতিহাসিক সামগ্রী অনায়াসেই আমাদের সামনে তুলে ধরে প্রাচীন পৃথিবীর ছবি। কিন্তু টাইম ট্রাভেল মানে শুধুই কি অতীত দর্শন? যদি মিউজিয়ামের হাত ধরেই হাজির হওয়া যায় ভবিষ্যতের দুনিয়ায়? হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। চলতি বছরের শুরুতেই দুবাই-এ খুলেছে এমনই এক অবাক করা জাদুঘর।
‘মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার’ (Museum Of The Future)। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘ভবিষ্যতের জাদুঘর’। দুবাই-এর (Dubai) জুমাইরা এমিরেটস টাওয়ারের নিকটবর্তী এই জাদুঘর আজকের সময়ের থেকেও এগিয়ে রয়েছে অন্ততপক্ষে ৫০ বছর। হ্যাঁ, এমনটাই দাবি জাদুঘর কর্তৃপক্ষের। ভবিষ্যতের পৃথিবী ঠিক কেমন হবে? আগামীদিনের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষা কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল— সবই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই জাদুঘরে।
কিন্তু আদৌ কি ভবিষ্যৎকে আগে থেকে জানা সম্ভব? সময়ের প্রবাহ কোন পথে যাবে তা বিজ্ঞানও যে আজ পর্যন্ত বলতে পারেনি। তবে এই মিউজিয়ামে দেখানো দৃশ্যপট সবটাই কি অবাস্তব, কল্পনামাত্র? না, সম্পূর্ণ কাল্পনিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর অবস্থা, প্রযুক্তির উন্নতির হার, জলবায়ু পরিবর্তন— এসব কিছুর পরিসংখ্যান এবং নথির ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে এই মিউজিয়াম। রীতিমতো গবেষণা জড়িয়ে রয়েছে তার পিছনে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ তারিখে উদ্বোধন হয়েছিল এই মিউজিয়ামের। তার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দুবাই-এর ‘মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার’। তাকে নিয়ে দেদার চর্চাও চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তা হবে নাই বা কেন? ভবিষ্যতের একাধিক সম্ভাবনাকেই যে মানুষের চোখের সামনে মেলে ধরছে এই জাদুঘর। শুধুমাত্র গবেষণার তথ্য ও পরিসংখ্যান নয়, সেইসব গবেষণার বাস্তব ফলাফলকেই যেন চোখের সামনে হাজির করছে এই জাদুঘর। মহাকাশ পর্যটনের যান থেকে শুরু করে, ভূপৃষ্ঠের ৬০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত ওএসএস স্পেস স্টেশন, সাইবারডগ, পাখিদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ রোবট, ভাইরাস প্রতিরোধী পোশাক, ড্রোন, আন্ডারস্কিন পেমেন্ট চিপ, চার সহস্রাধিক প্রাণীর ডিএনএ ব্যাঙ্ক— এই জাদুঘরে হাজির হলে আক্ষরিক অর্থেই মনে হবে যেন এসে পড়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দুনিয়ায়।
তবে শুধু বিজ্ঞানের দিক থেকেই নয়। এই মিউজিয়ামের নজিরবিহীন স্থাপথ্যকলাও রীতিমতো অবাক করার মতোই। ইতিমধ্যেই তার মুকুটে চড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরতম ভবনের পালক। ৭৭ মিটার লম্বা এই বাড়ির মধ্যে সবমিলিয়ে রয়েছে সাতটি তলা। যার মধ্যে একটি তলা সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষিত হয়েছে কেবলমাত্র শিশুদের জন্য। তাছাড়াও রয়েছে বুদ্ধিজীবীদের আলাপ-আলোচনা করার জন্য ইন্টেলেকচুয়াল সেন্টার। এই অবাক করা প্রদর্শনীশালাটি ঘুরে দেখার জন্য খরচ করতে হবে মাত্র ১২৪ দিরহাম। অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় মাত্র ৩ হাজার টাকা।
কথায় আছে, বিজ্ঞানের পরিধির পর শুরু হয় কল্পনার রাজ্য। আর যেখানে কল্পনার শেষ সেখান থেকেই শুরু হয় বিজ্ঞান। দুবাই-এর এই জাদুঘর যেন এই দুই পৃথিবীর ঠিক মধ্যবিন্দু। এই জাদুঘরে প্রদর্শিত সমস্ত সামগ্রী আগামীদিনে বাস্তবায়িত হবে কিনা তা বলা অসম্ভব। কিন্তু এ-কথা স্বীকার করতে আপত্তি নেই, অনেকটা জুলে ভার্নের মতোই ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে দুবাই-এর ‘মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার’…
Powered by Froala Editor