দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ঠাকুরদ্বার অঞ্চল। চিঞ্চোলি রাস্তার ঠিক ধারেই প্রাচীন এক ভবনের একতলায় ছোট্ট একটি হোটেল। না, রাজকীয়তার ছাপ নেই কোনো। নেই ভিআইপি অতিথিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও। খাবারের দামও সাধারণের সাধ্যের মধ্যেই। তা সত্ত্বেও রাত-দিন খ্যাতনামা সেলিব্রিটিদের ভিড় লেগে থাকত এই রেস্তোরাঁয়। একটা সময় এই রেস্তোরাঁর প্রায় নিত্যদিনের খরিদ্দার ছিলেন খোদ রাজেশ খান্নাও। বলতে গেলে মুম্বাইয়ের (Mumbai) আইকন হয়ে উঠেছিল ‘সান-শাইন’ (Sun-Shine) খ্যাত ঠাকুরদ্বারের এই রেস্তোরাঁ। এবার চিরদিনের মতো বন্ধ হতে চলেছে এই ইরানি হোটেলের দরজা।
আজ থেকে ১০০ বছর আগের কথা। মুম্বাই-এ এসে ব্যবসা শুরু করেছিল ইরানের আরদেশি পরিবার। খাবারের ব্যবসা। লাভ মন্দ ছিল না মোটেই। ফলে, কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে আস্ত একটি রেস্তোরাঁ খুলে ফেলেন আরদেশিরা। পরবর্তীতে রেস্তোরাঁর সঙ্গেই সংযোজিত হয় বার। তবে প্রাচীন এই ভবনটিই এবার ভাঙা পড়তে চলেছে বোম্বে মেট্রোপলিটন কর্পোরেশন-এর আদেশে।
‘সান-শাইন’ রেস্তোরাঁ খোলারও প্রায় ২০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এইচএম পেটিট উইডোস হোম খ্যাত এই ভবনটি। অর্থাৎ, ১২০ পেরিয়েছে তার বয়স। তবে সেই নিরিখে প্রাচীন এই স্থাপত্যের রক্ষণাবেক্ষণ প্রায় হয়নি বললেই চলে। বহুতলটির একাধিক অংশ ধরেছে ফাটল, গজিয়েছে বট-অশ্বত্থের চারা। জরাজীর্ণ এই বাড়ি ভেঙে পড়ে প্রাণহানি ঘটতে পারে যে-কোনো সময়, বছর কয়েক আগে এমনটাই দাবি করেছিল বোম্বে মেট্রোপলিটন কর্পোরেশন। বাড়িটি ভেঙে ফেলার ফরমানও জারি করে বিএমসি।
তবে পৌরসভার এই সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না আবাসিকরা। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ‘সান-শাইন’ রেস্তোরাঁ-সহ একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। মামলা উঠেছিল আদালতে। প্রথম স্থানীয় আদালত ও বোম্বে হাইকোর্ট এবং পরবর্তীতে জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। তবে প্রতিক্ষেত্রেই রায় আসে পৌরসভার পক্ষেই। আগামী ৩০ তারিখ এই ভবন ভাঙার কাজ শুরু হবে বলেই জানিয়ে দিয়েছে মুম্বাই পৌরসভা। তাই ভবন খালি করতে আগামী ২০ নভেম্বরই চিরকালের মতো বন্ধ হচ্ছে ইরানি রেস্তোরাঁটির দরজা।
সাহিত্য সংঘ মন্দির নাট্যগৃহের অত্যন্ত কাছে অবস্থিত হওয়ার কারণে, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তারকাদের ভিড়ও লেগে থাকত ‘সান-শাইন’-এ। হাজির হতেন হরেক কিসিমের, হরেক স্বাদের মানুষ। তাঁদের মধ্যে কেউ কবি, কেউ অভিনেতা, কেউ আবার জড়িয়ে রাজনীতির সঙ্গে। বলতে গেলে, এই রেস্তোরাঁ হয়ে উঠেছিল সাংস্কৃতিক আড্ডার কেন্দ্রস্থল। কাজেই এই পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে জনকল্যানমূলক হলেও, তা নিয়ে খুশি নন স্থানীয়রা। খুশি নয় ইরানি হোটেলটির কর্তৃপক্ষও। মাথার উপর থেকে ছাদ সরিয়ে নেওয়া হলেও, পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থাই করা হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। একইসঙ্গে ‘সান-শাইন’-এর দরজা বন্ধ হওয়ায় উপার্জন হারাবেন বহু মানুষ, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…
Powered by Froala Editor