করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গেও শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা তুলনামূলক নিরাপদ। ফলে বাবা-মা দুজনেই সংক্রমণের শিকার হলেও শিশুরা নিরাপদ থাকছে অধিকাংশক্ষেত্রেই। কিন্তু শারীরিকভাবে নিরাপদ হলেও কতটা সুরক্ষিত তাদের জীবন? সেই খবর হয়তো অনেকেই রাখেন না। এবার সেইসব অসহায় শিশুদের দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল মুম্বাইয়ের এনজিও রুবেল নাগি আর্ট ফাউন্ডেশন। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সংস্থার ডে-কেয়ার হোমগুলিকে বিপন্ন শিশুদের সেফ-হোম হিসাবে গড়ে তুলেছে কর্তৃপক্ষ।
এপ্রিল মাস থেকেই দেশের নানা প্রান্তে এই উদ্যোগ শুরু করেছে রুবেল নাগি আর্ট ফাউন্ডেশন। মুম্বাই ছাড়াও দিল্লি, নয়ডা, রাজস্থানের কেন্দ্রগুলি মিলিয়ে আশ্রয় পেয়েছে অন্তত ২৫০ জন শিশু। আর প্রত্যেকেই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের সন্তান। সংস্থার কর্ণধার রুবেল নাগির মতে, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে বস্তিবাসী পরিবারগুলিতে আইসোলেশনের যথেষ্ট সুবিধা নেই। বেশ কিছু সংস্থা তাঁদের আইসোলেশনের জন্য সেফ হোমের ব্যবস্থা করলেও যেসব শিশুরা সংক্রমিত নয়, তারা অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে। বাবা-মাকে ছেড়ে একা বেঁচে থাকা একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ। আর এখান থেকেই নানারকম মানসিক সমস্যা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তাই তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেই জোর দিতে চাইছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী ৪১-৫০ বছরের মানুষদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। ফলে এটা ধরে নেওয়া স্বাভাবিক তাঁদের সন্তানরা কেউই প্রাপ্তবয়স্ক নয়। একাকিত্বের অবসাদ যেমন তাদের গ্রাস করেছে, তেমনই বাবা-মায়ের স্বাস্থ্য নিয়েও আতঙ্ক ঘিরে থাকছে সবসময়। অনেক ক্ষেত্রে সেফ হোম বা হাসপাতাল থেকে নিয়মিত খবর এসে পৌঁছচ্ছে না। শিশুরা আতঙ্কের বশে অনেক সময় ধরে নিচ্ছে, তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়ানো মানবিক দায়িত্ব। রুবেল নাগি আর্ট ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরেই বস্তিবাসী শিশুদের শিক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ে দায়িত্ব নিয়ে এসেছে। মানুষের মধ্যে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফলে ডে-কেয়ার সেন্টারে ছেলেমেয়ে জায়গা পাওয়ায় বাবা-মাও অনেকটাই নিশ্চিন্ত বোধ করছেন।
সেন্টারে জায়গা নেওয়ার আগে যেমন প্রত্যেক শিশুর আরটিপিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে, তেমনই ১০ দিন পরপর র্যাজপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষারও ব্যবস্থা করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি পড়াশোনা থেকে খেলাধুলো সব বিষয়েই গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। শিশুরা যেন কোনোভাবেই মনে না করে তারা অসহায়। তবে গত একবছর ধরে অতিমারীর বিভৎসতা প্রত্যেকেই দেখেছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না। এই সমস্ত শিশুদের সঙ্গে সবসময় কথাবার্তার মাধ্যমে মানসিক শক্তি বাড়ানো একটা কঠিন কাজ। তবে স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলসভাবে সেই কাজ করে চলেছে। এর মধ্যেই অনেকের বাবা-মা কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। আবার কারোর অভিভাবকরা সুস্থ হয়ে ফিরে আসায় সন্তানরাও বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। অতিমারী পরিস্থিতি যতদিন না মিটবে, ততদিন এই কর্মকাণ্ড চলবে। আর এর মধ্যেই যারা অনাথ হয়ে গেল, ভবিষ্যতে তাদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সংস্থা নেবে বলেই জানিয়েছেন রুবেল নাগি।
আরও পড়ুন
আগাম সতর্কতায় উপেক্ষা নেতৃত্বের, দ্বিতীয় তরঙ্গ নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি কোভিড উপদেষ্টা ফোরামের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিশ্বজুড়ে বোঝাপড়ার অভাবেই বারবাড়ন্ত কোভিডের, জানাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা