বেসরকারি এক হাসপাতালে নার্সের কাজে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। তার পর কেটে গেছে সুদীর্ঘ ২৮ বছর। চিকিৎসাজগৎ থেকে সরে এসে রাজনীতির হাত ধরেছিলেন কিশোরী পাদনেকার। মুম্বইয়ের বর্তমান মেয়র তিনিই। এই ভয়ঙ্কর মহামারীর সময়ে আবার পুরোনো কাজে ফিরতে দেখা গেল ৫৮ বছর বয়সী মেয়রকে। করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে তিনি অংশ নিলেন সামনের সারির যোদ্ধা হিসাবে।
প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী, তিনি প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন হাসপাতালের অবস্থা পরিদর্শনে বেরোন। সেখান থেকেই সরাসরি যান অফিসে। আঞ্চলিক নানান সমস্যার সমাধানের দায়ভারই তাঁর কাঁধে। তারপর ঘুরে বেড়াতে হয় শহরের একাধিক অঞ্চলে নানান কাজে। শুধুমাত্র ঠান্ডা ঘরে বসে পরিকল্পনা করলেই সমস্যার সমাধান হবে, এমনটা একেবারেই মনে করেন না পাদনেকার।
সোমবার প্রতিদিনের মতোই বি.ওয়াই.এল নায়ার হাসপাতালে সকাল ১১টা নাগাদ দেখা যায় মেয়রের গাড়ি। কিন্তু তারপরেই চমকে ওঠেন উপস্থিত সকলে। হ্যাঁ, মেয়রই নেমে আসছেন গাড়ি থেকে। কিন্তু পরনে শাড়ির বদলে শ্বেতশুভ্র নার্সের উর্দি, কোমরে লাল বেল্ট, কাঁধে ল্যাপেল।
নায়ার হাসপাতাল বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে কোভিড-১৯ সেন্টার হিসাবে। এদিন হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে ঘুরে দেখার পর, সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত হন তিনি। ডাকা হয় ওই হাসপাতালে কর্মরত সমস্ত জুনিয়র নার্সদের। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের নার্সিংয়ের শিক্ষার্থীরা কাজ করছে ওই হাসপাতালে। তাদের সঙ্গেই বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন তিনি। উদ্বুদ্ধ করেন এই মহৎ কাজে এগিয়ে আসার জন্য। উল্লেখ্য, হাসপাতালে রোগীর তুলনায় নার্সের সংখ্যা কম হওয়ায়, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিযুক্ত করা হয়েছে কাজে। অবশ্য এর আরো একটি কারণ রয়েছে। এই সময়ে তাঁরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবে মহামারীর সঙ্গে লড়াই করার।
সোমবার এক সপ্তাহ পরে কাজে ফিরতে দেখা গেল কিশোরী পাদনেকারকে। গত সপ্তাহে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন তিনি। ২২ এপ্রিল এক সাংবাদিকের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পরে ওই সাংবাদিকের কোভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ এলে, নিজেকে গৃহবন্দি করেন তিনি। তবে তিনদিন আগেই দুটি পৃথক টেস্ট নেগেটিভ আসে মেয়রের। তারপরই সোমবার কাজে ফিরলেন তিনি। তবে প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি পুরোনো পেশার হাত ধরতে দেখা গেল তাঁকে।
মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের হার ভয়ঙ্কর মাত্রা নিয়েছে। ভারতে মোট আক্রান্তের এক-চতুর্থাংশই মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। মৃত্যু হয়েছে সারে তিনশো’র বেশি মানুষের। আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কিছু ডাক্তার এবং নার্সও। সেই রাজ্যের রাজধানীর মেয়রকে সরাসরি চিকিৎসার কাজে নামতে দেখে, সাহস পাবেন সকল চিকিৎসাকর্মীরা। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নার্সের ভূমিকায় ফিরে যাওয়া মেয়রকে ধন্যবাদ বার্তা জানিয়েছেন অনেকেই। মেয়রের এই মানসিকতা অবাক করছে সকলকে।