উন্নয়ন এবং পরিবেশ, সাম্প্রতিক সময়ে বারবার এই দুইয়ের বিরোধ সামনে এসেছে। সম্প্রতি মুম্বাই শহরের রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পকে ঘিরে আবারও সামনে এসেছে এই বিরোধ। মুম্বাই থেকে বরিভালি এবং বরিভালি থেকে ভিরার পর্যন্ত বাড়তি রেললাইন বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে মুম্বাই রেল বিকাশ কর্পোরেশন (Mumbai Rail Vikash Corporation)। আর তার জন্যই ১২.৭ হেক্টর ম্যানগ্রোভ অরণ্য (Mangrove Forest) কেটে ফেলা হবে বলে জানা গিয়েছে। এই নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।
ভারতের অন্যতম ব্যস্ত রেলপথগুলির একটি মুম্বাই সাব-আর্বান রেলপথ। যাত্রী সংখ্যার তুলনায় রেলের সংখ্যা বেশ কম। আর তাই ভিড়ে ঠাসা থাকে সবসময়। আর এভাবেই ঘটে যায় নানা দুর্ঘটনাও। এই সমস্যা মেটাতে দীর্ঘদিন ধরেই রেলের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি উঠছিল। তবে তার জন্য প্রয়োজন বাড়তি রেলপথ। মুম্বাই থেকে বরিভালি পর্যন্ত রয়েছে ৫টি রেললাইন। আর বরিভালি থেকে ভিরার পর্যন্ত রয়েছে ৪টি। এই দুই রুটেই আরও একটি করে রেললাইন বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে মুম্বাই রেল বিকাশ কর্পোরেশন। এর জন্য তিনটি গ্রাম মিলিয়ে মোট ১২.৭ হেক্টর ম্যানগ্রোভ অরণ্য কাটা হবে। ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্র সরকারের বনবিভাগ থেকে ছাড়পত্রও মিলেছে। তবে বনবিভাগের এই ছাড়পত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা।
রেললাইন সম্প্রসারণের যে প্রয়োজন রয়েছে, সেই বিষয়ে অবশ্য সকলেই একমত। কিন্তু তার জন্য এই বিপুল বনভূমি ধ্বংস করার প্রয়োজন কতটা, তা খতিয়ে দেখার আবেদন জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। আর যদি সত্যিই তা প্রয়োজন হয়, তাহলে অন্যত্র বনভূমি সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এই বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে সকলের সম্মতির ভিত্তিতে চূড়ান্ত পরিকল্পনা না হলে ছাড়পত্র দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করছেন অনেকে।
অবশ্য বনবিভাগের ছাড়পত্রের পরেও মুম্বাই হাইকোর্ট এবং কোস্টাল রেগুলেটরি জোন অথরিটির ছাড়পত্র প্রয়োজন। এই পর্যায়ে হস্তক্ষেপ দাবি করছেন পরিবেশকর্মীরা। বিশেষ করে মুম্বাই হাইকোর্ট এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিক, এমনটাই দাবি তাঁদের। তবে মুম্বাই শহরের নব রূপায়ণের এই বিরাট প্রকল্পের সামনে পরিবেশ কর্মীদের দাবি কতটা শোনা হবে, তাই নিয়েও সংশয় থেকে যাচ্ছে। মহারাষ্ট্র সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসাবে রয়েছে ২৬ কিলোমিটার রেললাইন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা। তার জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের তরফ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা অনুদান নেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় বনভূমি সম্প্রসারণের কাজ যুক্ত করতে গেলে খরচ হয়তো অনেকটাই বাড়বে। কিন্তু পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন কি স্থায়ী হবে?
আরও পড়ুন
ভেনেজুয়েলার হারাতে-বসা অরণ্যকে বাঁচাচ্ছেন উপজাতি মহিলারা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সামগ্রিকভাবে অরণ্যাঞ্চল বাড়লেও কমেছে অরণ্য, জানাচ্ছে রিপোর্টের বিশ্লেষণ