মুম্বই, ভারতের বাণিজ্য নগরী। একদিকে বলিউড, বিশাল অভিজাত বাংলো, বহুতল ঝাঁ-চকচকে দুনিয়া; অন্যদিকে ছড়িয়ে আছে বস্তি এলাকা। আছে ধারাভি, ভারত তো বটেই দক্ষিণ এশিয়ারও বৃহত্তম বস্তি। করোনার থাবা পড়েছিল সেখানেও। আর সেই কারণেই চিন্তায় ছিলেন ডাক্তাররা। কে জানে, এবার কী হবে সবার! বড্ড তাড়াতাড়িই ভেবে নিয়েছিলাম আমরা। সবাইকে চমকে দিয়ে জেতার রাস্তা নিয়ে ফিরে এসেছে সেই দরিদ্র, অনুন্নত ধারাভি বস্তি! করোনা যুদ্ধের সময় যে খবর স্বস্তি তো দিচ্ছেই; হাজার হাজার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে।
ভারতে করোনা আক্রমণ যখন বাড়তে শুরু করল, সবার একটাই চিন্তা ছিল। কোনোভাবে দেশের দরিদ্র এলাকাগুলোয় ছড়িয়ে পড়লে তা ভয়ংকর আকার নেবে। বিশেষজ্ঞ থেকে চিকিৎসক— সবাই এই ব্যাপারেই চিন্তা করেছিলেন। এদিকে মহারাষ্ট্র, মুম্বইতে ক্রমশ বাড়ছিল করোনার প্রকোপ। এখনও বাড়ছে; মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ পেরিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি ধারাভি বস্তিতে পৌঁছে যায়, তাহলে তো শিয়রে সমন!
দেশের অন্যান্য বস্তি অঞ্চলে তো ছিলই; ধারাভি-কে নিয়ে এত ভয়ের কিছু বিশেষ কারণ ছিল। প্রথমত ও প্রধানত, এর আয়তন ও জনঘনত্ব। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি অঞ্চল তো বটেই, সেই সঙ্গে বিশ্বের সেই অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম যাদের জনঘনত্ব অনেক বেশি। একা ধারাভি বস্তি এলাকাতেই প্রায় ১০ লাখের মতো মানুষ বসবাস করে! কাজেই, করোনার প্রকোপ পড়লে যে কি অবস্থা হবে, তা অনুমান করাই যায়। কাজেই যখন ধারাভির প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেল তখন থেকেই লড়াইটা শুরু হয়েছিল। আক্রান্তের সংখ্যা যত বেড়েছে, তৎপরতাও বেড়েছে।
এপ্রিল মাস থেকে মহারাষ্ট্র প্রশাসন, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে টিম প্রতিটা দিন ধারাভির বাড়িগুলোয় সমীক্ষা চালাত। নিয়মিত স্যানিটাইজেশন, থার্মাল চেকিং, অক্সিজেন লেভেল চেকিং তো ছিলই। সেইসঙ্গে কাছেই বেশ কয়েকটি স্কুল এবং স্পোর্টস ক্লাবে কোয়ারান্টাইন সেন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রিপোর্ট পজিটিভ এলে বা সামান্য লক্ষণ দেখা গেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ধারাভিকে কেন্দ্র করে শুরু হল নতুন ক্যাম্পেইন ‘চেজ দ্য ভাইরাস’…
আরও পড়ুন
জায়গা নেই গোরস্থানে, পুরনো সমাধি খুঁড়েই শায়িত করা হচ্ছে করোনায় মৃতদের!
বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতাও ছিল কাজে। প্রথমত, সচেতনতার অভাব। এছাড়াও ধারাভির পরিবেশ, যেখানে আশি জনের জন্য একটি মাত্র বাথরুম বরাদ্দ! সবথেকে বড়ো প্রশ্ন ছিল সামাজিক দূরত্ব রক্ষার। এত বিশাল সংখ্যক মানুষের বসবাস, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে একেকটা ঝুপড়ি। সেক্ষেত্রে উপায় একটাই। রোগ আসার অপেক্ষা না করে প্রতিদিন নিয়ম করে পরীক্ষা করা।
আরও পড়ুন
সমুদ্রতটে একের পর এক কবর, সরকারের করোনা নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ব্রাজিলে
ফলও মিলছে হাতেনাতে। একটা সময় যে ধারাভি মুম্বইয়ের করোনা হটস্পট হয়ে গিয়েছিল, সেখানে এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে পরিস্থিতি। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও কমেছে। যেখানে গোটা মুম্বইয়ের করোনা সুস্থতার হার ৪১ শতাংশ, ধারাভির সেখানে ৫১ শতাংশ! লকডাউন প্রবলভাবে মানা হয়েছে। আর যাতে কারোর কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য বিনামূল্যে সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ডাক্তারি পরীক্ষাও বিনামূল্যে করে দেওয়া হয়। যার ফল এখন ভোগ করছে ধারাভি বস্তি। তবে লড়াই এখনও থামেনি। ভারতে যে পরিমাণে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে এখনও এই ব্যবস্থাই চলবে ধারাভিতে। ধারাভির এই মডেলই যাতে বিশ্বের অন্যান্য অনুন্নত জায়গায়, বিশেষ করে ব্রাজিলে রোড ম্যাপ হয়, সেটাই বলছেন অনেকে। চেষ্টা করলে যে করোনা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব, সেই বিশ্বাসটাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন এখানকার কর্মীরা…
আরও পড়ুন
করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল তিন লাখ, গোটা বিশ্বে চতুর্থ ভারত
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনার পরই আসতে চলেছে ভয়ংকর খাদ্য সংকট, সতর্কবাণী রাষ্ট্রসংঘের