মৃত অন্তত ১৫, নিখোঁজ অসংখ্য – অগ্ন্যুৎপাতে ভস্মীভূত জাভার পূর্বাঞ্চল

বিগত কয়েকদিন ধরেই প্রবল ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। কিন্তু কোনো বড়ো ধরনের দুর্যোগের পূর্বাভাস ছিল না। তারপরেও বাড়িঘর কেঁপে উঠতেই স্থানীয় বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, হয়তো বন্যা এসেছে। তবে সেই ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতেই চোখে পড়ে, পাশের আগ্নেয়গিরি থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার মিটার উঁচু লাভার স্তম্ভ। আর পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সেই লাভা নেমে এসেছে গ্রামের কাছে। শনিবার দুপুরে এমনই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সামনে পড়লেন জাভার (Java) পূর্বাঞ্চলের একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা। প্রায় ৪ দশক পর আবারও জেগে উঠেছে ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট সেমেরু (Mt. Semeru) আগ্নেয়গিরি। ইতিমধ্যে তার কবলে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫ জন মানুষ। ৫৬ জন মানুষ গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। আর নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা এখনও নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হয়নি।

প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নানা দুর্যোগের কথাই আজ আগে থেকে বলে দেওয়া যায়। সেই অনুযায়ী আগাম সুরক্ষার ব্যবস্থাও নেওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃতির খামখেয়ালি চরিত্র সম্পূর্ণ বুঝে ওঠা যে আজও সম্ভব হয়নি, মাউন্ট সেমেরুর ঘটনাই তা আর একবার প্রমাণ করে দিল। ১৯৪১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বহুবার অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছে মাউন্ট সেমেরু। কিন্তু তারপর আবার সবকিছু শান্ত হয়ে যায়। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠে একাধিক জনপদ এমনকি গুরুত্বপূর্ণ কিছু শহরও। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে একটি ছোটো বিস্ফোরণ ঘটে মাউন্ট সেমেরুতে। কিন্তু তাতে ক্ষয়ক্ষতি কিছুই হয়নি। শনিবারের আঘাত তাই একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল সকলের কাছে।

ন্যূনতম সম্বলটুকুও ফেলে প্রাণভয়ে পালিয়ে এসেছেন কয়েকশো মানুষ। লাভার স্তরের নিচেও কোথাও কোনোকিছু অক্ষত অবস্থায় থেকে গিয়েছে কিনা, তা খুঁজতে একবার গ্রামে ফিরতে মরিয়া সকলেই। কিন্তু জাভা সরকারের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে সকলকেই। অনেকের প্রিয়জন নিরুদ্দেশ। তাঁরা আদৌ পালিয়ে আসতে পেরেছেন কিনা, জানেন না কেউই। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের একাধিক বাহিনী তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তবে এর মধ্যে আরও বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটানা বৃষ্টিপাত। বৃষ্টির ঠান্ডা জল গায়ে লাগায় দ্রুত জমে যাচ্ছে লাভা। ফলে শক্ত পাথর সরিয়ে অনুসন্ধানের কাজও কঠিন হয়ে পড়ছে। আর এসবের মধ্যেই আজ সকালে আবারও বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে মাউন্ট সেমেরু। নতুন করে কতটা ক্ষয়ক্ষতি ঘটল, তা জানার জন্য আবারও অনুসন্ধানে নেমেছেন সরকারি কর্মীরা। আর ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসা মানুষগুলো দিন গুনছেন, সবকিছু শান্ত হয়ে গেলে আবারও গ্রামে ফিরবেন তাঁরা। শূন্য থেকে আবার শুরু করতে হবে জীবন।

Powered by Froala Editor

Latest News See More