দেহ রেখেছেন এই ফ্ল্যাটেই, একবছরের মধ্যেই বিক্রির পথে মৃণাল সেনের ঠিকানা

কলকাতা থেকে মুছে যেতে চলেছে মৃণাল সেনের ঠিকানা। গত বছর ২৩শে ডিসেম্বর এই মায়ার শহর ছেড়ে তিনি চলে যান। ভবানীপুরের পদ্মপুকুর রোডের তাঁর ছোট্ট ছিমছাম ফ্ল্যাটেই দেহ রাখেন তিনি। এক বছরের মধ্যেই মৃণাল-পুত্র কুনাল সেন স্থির করেছেন, কলকাতার এই তিন কামরার ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেবেন। বহুদিন থেকেই প্রবাসী তিনি।

বহু কালজয়ী সিনেমার নেপথ্যে ছিল ঘরটি। হাতবদল হতে চলেছে সেই ঘরেরই। কারণ দেখভালের লোকের অভাব। অবহেলিত চার তলার ফ্ল্যাটে এখন থাকে না কেউই। থাকার মধ্যে প্রায় দু'হাজার বই আর দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে বহু জাতীয়, আন্তর্জাতিক পুরস্কার। বইগুলির মধ্যে বেশির ভাগই চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক। দেশ বিদেশের দিকপালদের দেওয়া নানা বইতে ঠাসা তাঁর ফ্ল্যাট এখন সম্পূর্ণ তালাবন্ধ। মাঝেমাঝে সেখানে যান মৃণালের আমৃত্যু চিকিৎসক অধৃষ্য কুমার।

পদ্মভূষণ প্রাপ্ত এই পরিচালকের চিত্রনাট্যের পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে অধিকাংশ সিনেমার ফিল্ম, স্টিল ছবি ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে ছাত্রদের গবেষণার জন্য। একদা পুনে ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান মৃণালের স্মৃতিবিজড়িত টেলিফোন ও চশমাটি আছে বহরমপুর সিনে কন্ট্রোলে। তাঁর সংগ্রহের বিশাল সংখ্যক বইয়ের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বহু জেলার লাইব্রেরিগুলিকে। সল্টলেকের আল আমিন মিশনকেও কিছু দেওয়া হয়েছে।

মৃণাল সেন ২০০৫ সালে পান ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার। সিনেমাকে ভালোবেসে কলকাতার বুকে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো হাতে গোনা মানুষদের মধ্যে তিনি ছিলেন। চিরকাল বামপন্থী এই মানুষটির কাছে চিরঋণী থেকে যাবে ভারতীয় সিনেমা।
কলকাতা হারাতে চলেছে সেই 'মহাপৃথিবী'র জনক মৃণাল সেনের বাসভিটের শেষ চিহ্নটুকুও।

More From Author See More

Latest News See More