লাইব্রেরি বললে প্রথমেই কোন দৃশ্য ভেসে ওঠে আমাদের মনে? তাকের ওপরে, আলমারিতে সারি-সারি বই। মধ্যিখানে চেয়ার-টেবিল, পড়ার ব্যবস্থা। অনেকেরই খেদ, আস্তে আস্তে কমছে বাংলা বইয়ের পাঠকের সংখ্যা। ফলে, লাইব্রেরির অবস্থাও সঙ্গীন। অনেক লাইব্রেরি বন্ধের মুখে, কয়েকটি টিকে আছে সামান্য কয়েকজন সদস্য নিয়েই। এরই মধ্যে এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ সামনে আনলেন এক ভদ্রলোক, সুখময় পাণ্ডা।
গ্রামের দুঃস্থ মানুষগুলির মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন সুখময়বাবু। ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ১ নম্বর ব্লকের বৈতালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। একটি ভ্যানগাড়ির ওপর তৈরি করেছেন ছোট্ট এক লাইব্রেরি। পথে যেতে-আসতে দু’দণ্ড সময় পেলে অনেকেই হাতে নিয়ে পাতা উল্টে দেখেন বইগুলি। পছন্দ হলে, রেজিস্টারে নিয়ে যান বাড়িতে। নিয়ম আছে বইকি! এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই বই পড়ে ফেরত দিতে হবে।
প্রতি শনিবার গ্রামে ঘুরে বেড়ায় এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। নাম, ‘কিশলয় গ্রন্থাগার।’ বাড়ির সামনে এলেই, গ্রামের মানুষজন বেরিয়ে আসেন, পছন্দমতো বই নিয়ে যান। সুখময়বাবুর এই উদ্যোগে শামিল হয়েছে তাঁর স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও। সকলে মিলে, বিভিন্ন বই জোগাড় করে তিলে-তিলে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের এই লাইব্রেরি।
কে বলে বইয়ের জোর ফুরিয়েছে? পড়ার ও পড়ানোর ইচ্ছে থাকলে, অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করে তোলা যায়। ছোট্ট এই লাইব্রেরি তারই প্রমাণ। লোকের ঘরের কাছে পৌঁছে গেলেও, বই ফিরিয়ে দেবেন – এমন বুভুক্ষু পাঠক হয়তো জন্মাননি আজও।