পাহাড়চুড়োয় একের পর এক দুর্ঘটনা, কী বলছেন বাংলার পর্বতারোহীরা?

“আগে আমরা জানতাম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস মানেই পর্বতারোহণের সময়। এই সময় আকাশ একদম পরিষ্কার থাকবে। তুষারপাত বা ধসের সম্ভাবনাও তেমন থাকে না। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে এখন আবহাওয়া বিষয়টাই সম্পূর্ণ অপরিচিত হয়ে উঠছে। কখন কোনদিন থেকে বিপদ আসবে, কেউ বলতে পারেন না।” বলছিলেন ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার সম্পাদক দেবরাজ দত্ত।

প্রতি বছরের মতো এ-বছরেও সেপ্টেম্বর মাস থেকেই পর্বতারোহণে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকে। এর মধ্যে অনেকে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনই দুর্ঘটনাও নেহাত কম ঘটেনি। মাসখানেক আগেই হিমাচল প্রদেশ থেকে উদ্ধার হয়েছে দুই বাঙালি পর্বতারোহীর দেহ। এর মধ্যেই আবার উত্তরাখণ্ড থেকে কলকাতার দুজন পর্বতারোহীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যেই আবার উত্তরাখণ্ড থেকে ২০০৫ সালে হারিয়ে যাওয়া ৫ জন পর্বতারোহীর মৃতদেহও উদ্ধার হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন করে জাঁকিয়ে বসছে পাহাড়ি আতঙ্ক। তবে শুধু পাহাড়ের আবহাওয়ার অনিশ্চয়তাই নয়, আরও নানা কারণ থেকে যাচ্ছে এইসব দুর্ঘটনার পিছনে।

পর্বতারোহী অভিষেক তুঙ্গ বলছিলেন, এইসব দুর্ঘটনার পিছনে অন্যতম বড়ো কারণ উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতার অভাব। তাঁর কথায়, “বর্তমানে পাহাড়ের বিপদ সম্বন্ধে সচেতন হওয়ার মতো সমস্ত প্রযুক্তিই আমাদের হাতে আছে। কিন্তু খুব কম আরোহীই তা ব্যবহার করেন।” অভিষেকের সঙ্গে সহমত দেবরাজও। তিনি বলছিলেন, এখন অভিযাত্রীরা অনেকেই নানারকম ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে পর্বতারোহণ শেখেন, এবং হুজুগের বশে বেরিয়ে পড়েন। এতে বিপদ থেকেই যায়। তাছাড়া দেবরাজের মতে, “পর্বতারোহীরা অনেক সময়েই বোঝা হালকা করার জন্য খাবার দাবার থেকে শুরু করে অন্যান্য সামগ্রী নিজেদের সঙ্গে রাখেন না। ফলে একবার দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়ে।” এছাড়াও আরোহীদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার বিষয়টিতেও জোর দিচ্ছেন তাঁরা। দুর্যোগ হঠাৎ এলেও একসময় প্রকৃতিকে শান্ত হতেই হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ জায়গা খুঁজে নিয়ে অপেক্ষা করার চেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ আর কিছুই হয় না।

তাছাড়া এখন আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়াও আগের চেয়ে অনেক সহজ। জিপিএস-এর সাহায্য নিলে রাস্তা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও আর থাকে না। কিন্তু এইসমস্ত যন্ত্রপাতি সঙ্গে না নিয়েই বেরিয়ে পড়েন অনেকে। আরোহীরা আরেকটু সচেতন হলেই দুর্ঘটনা অনেকটা কমানো যায়। তবে কিছু পরিকাঠামোগত সমস্যাও থেকে গিয়েছে। যেমন অভিষেক বলছিলেন, “আমাদের দেশে বেসরকারি হেলিকপ্টার ওড়ানোর অনুমতি নেই। তাই কোনো আরোহী বিপদসংকেত পাঠালে নেপাল বা অন্যান্য দেশে যেমন নানা সংস্থা তাঁদের উদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন, আমাদের দেশে সেই সুযোগ নেই।”

আরও পড়ুন
কৃত্রিম পায়েই তিনটি পর্বতশৃঙ্গ জয় ইংল্যান্ডের অভিযাত্রীর

তবে এতকিছুর পরেও পাহাড় পাহাড়ই। সেখানে পদে পদে অনিশ্চয়তা থাকবে, তা সে প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন। কিন্তু সামান্য সুরক্ষাটুকু না নিয়ে নিশ্চিত বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়াও সাহসিকতা নয়। আরোহীরা এই বিষয়ে আরও সচেতন হয়ে উঠুক। দুর্ঘটনা যতটা সম্ভব হয় ততটাই যেন এড়ানো যায়।

আরও পড়ুন
দ্রুততম মহিলা পর্বতারোহী হিসেবে এভারেস্ট জয় চিনের শিক্ষিকার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
এভারেস্টে অক্সিজেন সিলিন্ডার ফেলে না-আসার নির্দেশ পর্বতারোহীদের

More From Author See More