বছরখানেক আগের কথা। ভূবিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছিল আজ থেকে এক-দেড় কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে অস্তিত্ব ছিল বিশালায়ন দৈত্যাকার পর্বতমালাদের। বিস্তৃতিতে কিংবা আয়তনে হিমালয়ের থেকেও কয়েকগুণ বড়ো তারা। উচ্চতায় হার মানাবে এভারেস্টকেও। তবে একটা সময় পর টেকটোনিক পাতের সঞ্চালনে হারিয়ে যায় তারা। তবে যদি বলা হয় এখনও অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে এধরনের দৈত্যাকার পর্বতশৃঙ্গ (Mountain Peak)?
যে-কারোর কাছেই এই কথা বিশ্বাস করা একটু কঠিন। তার কারণ, কৈশোর থেকেই আমরা পড়ে এসেছি বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট। তবে এবার তার থেকেও উঁচু পর্বতশৃঙ্গের হদিশ পেলেন গবেষকরা। তাও আবার এই আশ্চর্য পর্বতশৃঙ্গ নাকি লুকিয়ে রয়েছে আন্টার্কটিকায়!
আশ্চর্য এই পর্বতশৃঙ্গ আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। গবেষকদের মতে এই শৃঙ্গের উচ্চতা প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্টের উচ্চতা ৮.৮৪ কিলোমিটার। অর্থাৎ মাউন্ট এভারেস্টের প্রায় চার গুণ লম্বা এই পর্বতশৃঙ্গটি। কিন্তু কীভাবে তাঁরা খুঁজে পেলেন এই শৃঙ্গটিকে?
কয়েক হাজার ভূমিকম্প এবং পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণের মাধ্যমে তৈরি সিসমিক তরঙ্গের বিশ্লেষণের করেছিলেন গবেষকরা। সেখানেই ধরা পড়ে ভূপৃষ্ঠের গভীরে একটি বিশেষ অঞ্চল থেকে প্রতিফলিত হচ্ছে সিসমিক তরঙ্গ। যার বিস্তৃতি প্রায় ৪০ কিলোমিটার বা ২৪.৮ মাইল। সিসমিক তরঙ্গের বিশ্লেষণে, গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান এই প্রতিফলকটি আদতে একটি দৈত্যাকার পর্বত। তরঙ্গের প্রেক্ষিতে তৈরি করা হয় তার সিসমিক ছবিও। পৃথিবীর কেন্দ্র এবং গুরুমণ্ডলের মাঝামাঝি অবস্থিত এই পর্বতশৃঙ্গের ঘনত্ব ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতা, থুড়ি গভীরতায় আলাদা আলাদা। পৃথক তার গঠনগত উপাদানও। এই পর্বতশৃঙ্গের এক-একটি স্তরের গভীরতা কোথাও কয়েকশো মিটার, কোথাও আবার কয়েক কিলোমিটার। সেখানে যেমন রয়েছে ব্যাসল্ট শিলা, তেমনই রয়েছে রূপান্তরিত শিলারূপও।
আজ থেকে কয়েক মিলিয়ন বছর আগে টেকটোনিক পাতের সঞ্চালনে এই পর্বত পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের নিচে অর্থাৎ গুরুমণ্ডলে ঢুকে যায় বলেই ধারণা গবেষকদের। তারপর একাধিকবার বদলেছে পৃথিবীর বাহ্যিক পরিবেশ। বদলেছে উপরিতলের ভূপ্রকৃতি এবং আবহাওয়া। ফলে, সম্পূর্ণভাবেই এই পর্বত হারিয়ে গেছে দৃশ্যমানতা থেকে। আগামীতে পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং বিবর্তন বুঝতে এই পর্বতশৃঙ্গ বিশেষভাবে সাহায্য করবে, এমনটাই অভিমত গবেষকদের।
Powered by Froala Editor