লিঙ্গবৈষম্যে বিধ্বস্ত সমাজে শিশুর পরিচয়ের সঙ্গে সব সময়েই জড়িয়ে থাকে তার বাবার নাম। অথচ সেই শিশুর জন্মের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তার মায়ের যন্ত্রণার কোনো মর্যাদাই দেওয়া হয় না। তবে এখন সমাজের সেই ভাবনা অনেকটাই বদলেছে। এমনকি পিতৃপরিচয়ের বদলে মাতৃপরিচয়কেই বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে নানা দেশে। তবে আফগানিস্তানে এখনও অবধি কোনো শিশুর রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রে তার মায়ের নামের উল্লেখও থাকত না। সম্প্রতি সেই ব্যবস্থায় বদল আনতে চলেছে আফগান সরকার। এবার থেকে বাবার নামের সঙ্গে থাকবে মায়ের নামও।
আফগানিস্তানের দীর্ঘদিনের রীতি হল, মহিলাদের নাম কখনও প্রকাশ্যে লেখা বা উচ্চারণ করা যাবে না। আর ঠিক সেই কারণেই কোনো পরিচয়পত্রে মায়ের নামের উল্লেখ থাকে না। শুধু এখানেই আটকে নেই লিঙ্গবৈষম্যের জ্বলন্ত স্বরূপ। কিছুদিন আগেই ডাক্তারি প্রেসকিপশনে দুই মহিলার নামের উল্লেখ থাকায় তাঁদের শারীরিক নিগ্রহের মুখেও পড়তে হয়েছিল। আর এর মধ্যেই চলেছে সেদেশের মহিলাদের দীর্ঘ লড়াইও।
আফগানিস্তান থেকে শুরু হওয়া #হোয়ারইজমাই_নেম আন্দোলন সারা পৃথিবীতেই সাড়া ফেলে দিয়েছিল। তবে এর সঙ্গে যে সেদেশের কঠিন বাস্তবতা জড়িয়ে, সে খবর অনেকেই রাখেননি। কিন্তু আফগানিস্তানে সেই আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে বেশি সময় লাগেনি। সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে আন্দোলন অনেকটাই সহজ হয়েছে। ফেসবুক, ট্যুইটারে অনেকেই নিজেদের নাম প্রকাশ করেছেন। এর জন্য নানা ধরনের নিগ্রহের মুখে পড়তে হলেও থেমে থাকেননি সেদেশের মহিলারা।
অবশেষে দীর্ঘ লড়াইয়ের স্বীকৃতি দিল সরকার। আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা লালেহ ওসমানি সরকারের ঘোষণার পর আর আনন্দ ধরে রাখতে পারেননি। সেইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এবং তাঁর মন্ত্রীসভাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য। তবে এসবই লিঙ্গসাম্যের দিকে সামান্য কিছুটা অগ্রগতি। সামনে আরও অনেক লড়াই বাকি। আশা করা যায় ক্রমশ বিভেদমুক্ত সমাজের দিকে এগিয়ে যাবে আফগানিস্তান।
আরও পড়ুন
#হোয়্যারইজমাইনেম - নিজেদের নামের মধ্যেই মুক্তির ডানা খুঁজছেন আফগান মেয়েরা
Powered by Froala Editor