প্রতিদিন কাশ্মীর থেকে দিল্লিতে পৌঁছচ্ছে মাতৃদুগ্ধ, ৩৫ দিনের শিশুকে বাঁচাতে অক্লান্ত প্রচেষ্টা

গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দক্ষিণ দিল্লির আইজিআই বিমানবন্দরে দেখা গিয়েছে জিগমে ওয়াংডুকে। সেখান থেকে একটি করে থার্মোকলের আইসবক্স হাতে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। প্রতিদিন তাঁকে এভাবে আসতে দেখে কেউ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়েছেন কি? যদি সেদিকে লক্ষ করে কেউ কারণ জানতে চাইতেন, তাহলে হয়তো আরও অবাক হতেন। পরিচিত হতেন এক অদ্ভুত রোগের সঙ্গে। যে রোগ আক্রমণ করেছে জিগমের দিন ৩৫ বয়সের ছেলে।

৩৫ দিনের একটি শিশুর কথা বললেই বোঝা যায়, মায়ের বুকের দুধ ছাড়া আর কিছু খাওয়ার বয়স তার হয়নি। কিন্তু এই শিশুটির জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার মা দোর্জে পালমো বুঝতে পারেন, দুধ খেতে পারছে না ছেলেটি। সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরের লেহ শহরের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হলেন তিনি। কিন্তু সেখানে তো চিকিৎসা সম্ভব নয়। অপারেশনের জন্য পাঠাতে হবে দিল্লিতে।

তখন জুন মাস। যোগাযোগ ব্যবস্থা তখনও স্বাভাবিক হয়নি। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ছেলেটির এক আত্মীয় চলে এলেন দিল্লি শহরে। অন্যদিকে মাইসোর থেকে ছুটে এসেছে ছেলেটির বাবা জিগমেও। তারপর দিল্লির শালিমার বাগে ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি অঞ্চলে শুরু হল চিকিৎসা।

ছেলেটির রোগটিকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ট্রাকিওইসোফেগাল ফিশ্চুলা। অর্থাৎ তার শ্বাসনালি এবং খাদ্যনালি একসঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। এমনটা নাকি অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে বেশিরভাগ শিশুই মারা যায়। জানিয়েছেন চিকিৎসক ডাঃ হর্ষবর্ধন। তাঁর হাতেই ১৯ জুন অপারেশন হয় ছেলেটির। আর এরপর প্রাথমিকভাবে গুঁড়ো দুধ দেওয়া হলেও কিছুদিনের মধ্যেই চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, সুস্থ করে তুলতে যেভাবেই হোক মায়ের বুকের দুধ প্রয়োজন। কিন্তু এই সময় তাঁর পক্ষে দিল্লি আসাও সম্ভব নয়। তাই শেষ পর্যন্ত শুধু দুধটুকু নিয়ে আসতে হল ১০০০ কিলোমিটার দূরে। আর প্রতিদিন এভাবেই আইস বক্সে আসতে থাকল মায়ের দুধ। 

আরও পড়ুন
করোনার মধ্যেই নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব, রাজ্যে অজানা জ্বরে আক্রান্ত একাধিক শিশু

ব্যাপারটা তিনদিনের মধ্যে নজরে পড়ল বিমান কর্তৃপক্ষেরও। আর পুরো ঘটনাটা জানতে পেরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল তারাও। প্রতিদিন এই দুধ পরিবহনের জন্য কোনো খরচ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। আর এত মানুষের মিলিত প্রচেষ্টা কি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হতে পারে? এর মধ্যেই সুখবর হল, ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠেছে ছেলেটি। আর দু-একদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাবে সে। তারপর সেই ১০০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবে মায়ের কোলে। তারপর? আর পাঁচটা শিশু যেভাবে বড়ো হয়, এও বড়ো হবে।

আরও পড়ুন
মহামারীতে দুর্গত শিশুদের পাশে কিশোরী গ্রেটা, ১ লক্ষ ডলার অনুদান ইউনিসেফে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ফিতে বাঁধার সমস্যার ইতি, অটিস্টিক শিশুদের জন্য বাজারে এল বিশেষ জুতো