বয়স ১০০ ছাড়িয়েছে প্রায় এক দশক আগে। আজও রোজ সকালে জলের পাত্র হাতে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। চার কিলোমিটার রাস্তা ধরে যে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর সন্তানরা। সেই সারিবদ্ধ বটগাছের গোড়ায় পরম স্নেহে জল ঢেলে দেন। এই গাছেদেরই ৭০ বছর ধরে সন্তান বলে জেনে এসেছেন তিনি। আরও নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন। তবে এই ৩৮৫টি বটগাছের জন্যই সবচেয়ে বেশি পরিচিত তিনি। তিনি আর কেউ নন, কর্ণাটকের বৃক্ষ-জননী সালুমারাদা থিম্মাকা।
সম্প্রতি কর্ণাটকের ১০৮ বছরের সেই বৃক্ষ-জননীকেই সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ কর্ণাটক। ব্রিটিশ ভারতে প্রান্তিক সমাজে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি কোনো প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ পাননি। কিন্তু তিনি যে শিক্ষা এই সমাজকে দিয়েছেন, তা আজ সত্যিই ভীষণ প্রয়োজনীয়। সন্তানহীন থিম্মাকা দম্পতি অভিভাবকত্বের স্বাদ পেয়েছিলেন এই গাছেদের মধ্যেই। সে আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগের কথা। প্রথম বছর লাগিয়েছিলেন ১০টি গাছ। পরের বছর ১৫টি। তার পরের বছর ২০। ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়তেই থাকে। ৪ কিলোমিটার রাস্তায় ৩৮৫টি বটগাছ লাগিয়েছেন। নিজেরাই তাদের পরিচর্যা করেছেন। গরু-ছাগল যাতে গাছ মুড়ে খেতে না পারে, তাই কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন চারপাশ। বটগাছ ছারাও আরও নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন আশেপাশে। তারপর ১৯৯১ সালে স্বামীকে হারালেন সালুমারাদা। সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ল একা তাঁর কাঁধেই। আর আজও সমানে সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। বয়স হয়েছে ১০৮। তাতে কী? বয়স তো একটা সংখ্যা মাত্র।
গতবছর একটি রাস্তা সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য তাঁর লাগানো গাছগুলি কেটে ফেলার কথা বলা হয়েছিল। ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিলেন সালুমারাদা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য হয় কর্ণাটক সরকার। ততদিনে যে তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়ে গিয়েছেন। ২০১৬ সালে বিবিসি প্রকাশিত বিশ্বের সেরা ১০০ মহিলার তালিকায় ওঠে তাঁর নাম। এছাড়াও পেয়েছেন হাম্পি ইউনিভার্সিটির নাদোজা পুরস্কার, ন্যাশানাল সিটিজেন পুরস্কার এবং দেশবিদেশের আরও নানা সম্মান। দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনেও তাঁর নিজের হাতে লাগানো একটি গাছ বড় হচ্ছে। এই বিপন্ন পরিবেশকে বাঁচাতেই হবে, এটুকুই জানেন থিম্মাকা। তাই এখন তিনি বৃষ্টির জল সংরক্ষণের কাজ করছেন। আর এরপর প্রয়াত স্বামীর নামে একটি হাসপাতাল তৈরির ইচ্ছাও আছে তাঁর। তথাকথিত অক্ষরপরিচয়হীন এই মানুষটিই শেখাচ্ছেন সভ্যতার নতুন শিক্ষা।
Powered by Froala Editor