প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ টন আবর্জনা তৈরি হচ্ছে মানব সভ্যতার হাত ধরে। বিপুল পরিমাণ এই বর্জ্যের সামান্য একটি অংশ পরিশোধনের ব্যবস্থা করে মানুষ। আর বাকিটা? দূষক হিসাবে থেকে যায় পরিবেশেই। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এল ভিন্ন তথ্য। তরল আকারে এই দূষিত বর্জ্য ভূগর্ভস্থ জলে মেশার আগেই তা পরিশোধনে হাত লাগায় প্রকৃতি। আর এভাবেই প্রতি বছর প্রায় ৪.২ কোটি টনের মানববর্জ্য স্যানিটাইজ করছে প্রকৃতি নিজেই।
‘ওয়ান আর্থ’ জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা। যুক্তরাজ্যের ক্র্যানফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যালিসন পার্কার জড়িত ছিলেন মূল সমীক্ষার সঙ্গে। এই রিপোর্টে দাবি করা হয়, প্রতি বছর এই পরিমাণ বর্জ্য কৃত্রিমভাবে পরিশোধনের ব্যবস্থা করতে গেলে তার জন্য খরচ পড়ত ৪.৪ বিলিয়ন ডলার। তৈরি করতে হত ২০ লক্ষ ঘনমিটারের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো।
কিন্তু কীভাবে হচ্ছে এই পরিশোধনের প্রক্রিয়া? এককথায় উত্তর, মিথোস্ক্রিয়া। প্রকৃতিতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং অন্যান্য অণুজীব এই ধরণের বর্জ্যগুলির বিয়োজন ঘটিয়ে চলেছে অবিরত। তারপর তা ফিল্টার করছে মাটি। ভূগর্ভস্থ জলের কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই পরিশুদ্ধ করে তা শোষণ করে নিচ্ছে পৃথিবীর বাইরের ‘ত্বক’।
গবেষণায় উঠে আসে, পৃথিবীর ২৫ শতাংশ মানুষের কাছে এখনও সুবিধা নেই প্রাথমিক স্যানিটাইজেশনের। আরও ১৪ শতাংশ মানুষের কাছে নেই কোনো পাকা শৌচাগারও। এমনকি অনেক শহরেও নিকাশি ব্যবস্থার সঠিক পরিকাঠামো তৈরি করতে পারেনি প্রশাসন। এইসব ক্ষেত্রে মনুষ্যজাত বর্জ্য পদার্থ সরাসরি অপসারিত হচ্ছে প্রকৃতিতে।
আরও পড়ুন
জমি অধিগ্রহণ, প্রকৃতি-নিধন করে নির্মাণকাজ; প্রতিবাদে লং মার্চ ম্রো জনগোষ্ঠীর
এই প্রাকৃতিক পরিশোধনে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে পৃথিবীর জলাভূমি ও ম্যানগ্রোভ অরণ্যগুলি। তবে ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়া আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। সেইসঙ্গে শহরাঞ্চলে মাটিও দ্রুত ঢাকা পড়ে যাচ্ছে কংক্রিটের আচ্ছাদনে। এক কথায় প্রকৃতির এই বিনামূল্য পরিষেবা থেকেই যেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সভ্যতা। যার ফলাফল হতে চলেছে ভয়ঙ্কর…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সংকটে রাজ্যের অধিকাংশ জলাভূমি, হারাচ্ছে বাস্তুতন্ত্রও; আশঙ্কিত পরিবেশকর্মীরা