৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলা ভর্তি হয়েছিলেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে। একদিকে প্রসব সংক্রান্ত জটিলতা তো ছিলই। তার মধ্যেই করোনার সংক্রমণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকায় ভেন্টিলেশনে নিয়ে যাওয়া হয় প্রসূতিকে। তবুও হাল ছাড়েননি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা। ১১ দিন ধরে লড়াই চলার পর অবশেষে মিলল সাফল্য। আজ দুপুরেই সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় সন্তানের জন্ম দিলেন সেই মহিলা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডাঃ পূজা ব্যানার্জি ভৌমিকের নেতৃত্বেই ঘটল এই অসাধ্যসাধন। পূর্ব ভারতে তো বটেই, সম্ভবত সারা ভারতেই এই প্রথম কোনো ভেন্টিলেশনে থাকা কোভিড আক্রান্ত সফলভাবে সন্তানের জন্ম দিলেন।
“গত ১০ জুন প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। তখন তাঁকে ভেন্টিলেশনে নিয়ে যেতে হয়।” জানালেন প্রসূতি বিভাগের স্নাতোকত্তর ছাত্রী ডাঃ শৃঙ্কা মুখার্জী। তিনি আরও বললেন, “এরপর একটি মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রসবের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সিজার করা হবে। তাহলে শিশুটির এবং তার মায়ের, দুজনেরই জীবনের সম্ভাবনা বাড়বে। আজই সেই অপারেশনের দিন স্থির ছিল। কিন্তু সকাল থেকে তাঁর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৫০-এর নিচে নেমে যায়। ফলে কোনোভাবেই ভেন্টিলেশন থেকে সরিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের মধ্যেই একটি অস্থায়ী ও.টি. তৈরি করে অপারেশন করা হয়।”
করোনা অতিমারীর মধ্যে নানারকম নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে এগোতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এমন অভিজ্ঞতা কারোর জীবনেই কখনও আসেনি। ডাঃ মুখার্জী বলছিলেন, “অপারেশন থিয়েটারের উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া এরকম একটা সার্জারি করা সত্যিই কঠিন। তার উপর যেহেতু রোগী করোনা আক্রান্ত, তাই সার্জেনদেরও পিপিই পরেই অপাররেশন করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে এমন একটা সার্জারিতে সাফল্য পাওয়া কঠিন তো বটেই।” অপারেশনের পর মা ও শিশু দুজনেরই প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে। এই মুহূর্তে শিশুটি ভর্তি রয়েছে হাসপাতালের শিশু বিভাগে। আর মায়ের শরীরে করোনা রোগের লক্ষণগুলি এখনও একইরকম প্রকট। তবে গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাওয়ায় তিনিও খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
রোজই একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এর মধ্যেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের এই সাফল্য যে মানুষকে অনেকটাই আত্মবিশ্বাস দেবে, সে-কথা বলাই যায়।
Powered by Froala Editor