রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া এক অতি পুরনো প্রাণঘাতী অসুখ। বিশেষ করে ভারতীয়দের কাছে এই রোগ একেবারেই অপরিচিত নয়। তবে অনেকেই নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন। ঠিক কতজন মানুষ আক্রান্ত এই মারাত্মক রোগে? ডিসেম্বরের শুরুতে ন্যাশানাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের রিপোর্টে উঠে এল তারই এক ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান। এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দেশের মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশিই রক্তাল্পতায় ভুগছেন।
সারা দেশের ২২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে পারিবারিক তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে অবাক বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তের প্রতি ডেসিলিটারে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১১ গ্রামের কম হলে ধরে নেওয়া হয় সে রক্তাল্পতায় ভুগছে। মহিলাদের ও পুরুষদের ক্ষেত্রে এই মাত্রা যথাক্রমে ১৩ ও ১৪ গ্রাম। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ১ মাস থেকে ৫ বছর বয়সের শিশু এবং ১৬ থেকে ৪৯ বছরের মহিলাদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের বেশিই রক্তাল্পতায় ভুগছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রেও সংখ্যাটা আশঙ্কাজনক। গুজরাট, উত্তরাখণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে ৪০ শতাংশের বেশি পুরুষ একই রোগে আক্রান্ত।
হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। লাদাখ অঞ্চলে ৯২.৫ শতাংশ শিশু ও ৯২.৮ শতাংশ মহিলা রক্তাল্পতায় ভুগছেন। পাশেই হিমাচলপ্রদেশে সংখ্যাটা একটু কম। তবে সেখানেও ৯০ শতাংশের বেশি শিশু ও মহিলা আক্রান্ত। মূলত ভারতের খাদ্যাভ্যাসকেই এই সমস্যার জন্য দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। ভাত এবং রুটিই ভারতীয়দের প্রধান খাদ্য। ফলে শরীরে শর্করার অভাব দেখা যায় না। কিন্তু ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কম। আর ভিটামিন-এ এবং আয়রনের অভাবেই মূলত রক্তাল্পতা দেখা যায়। এছাড়াও জিনগত কারণ থাকতে পারে। তবে সে-বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও বিশদে গবেষণার প্রয়োজন। অন্যদিকে চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, শরীরে হিমোগ্লোবিনের প্রয়োজনীয় মাত্রার হিসাবটা নেওয়া হয়েছে পাশ্চাত্যের দেশগুলির সমীক্ষা থেকে। ভারতের ক্ষেত্রে কিন্তু দেখা যায় অনেকের ক্ষেত্রে মাত্রাটা ৬-এর কাছাকাছি এসে গেলেও তাঁরা দিব্যি সুস্থ থাকেন। হতে পারে সেটা মানসিক জোরের কারণে। আবার এমনও হতে পারে, ভারতীয়দের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রাই একটু কম। তবে নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে গেলে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
Powered by Froala Editor