ফিরে দেখা ২০২১: যে ১০ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেসামাল পৃথিবী

/১২

প্রতিনিয়তই নতুন রূপে ধরা দিচ্ছে কোভিড। স্বাভাবিকভাবেই এই মহামারীকে ঠেকানোই এখন প্রধান লক্ষ্য মানব সভ্যতার। কিন্তু এসবের মধ্যেই নিঃশব্দে বেড়ে চলেছে অন্য এক বিপদ। জলবায়ু পরিবর্তন। আর তার জেরেই ক্রমশ একের পর এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে চলেছে পৃথিবী। ধ্বংস হচ্ছে কয়েক বিলিয়ন ডলারের সম্পদ। চলতি বছরে তাণ্ডব চালানো এমনই ১০ প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকা তৈরি করল ব্রিটেনের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইড। ফিরে দেখা যাক, বিভীষিকাময় এই তালিকাকে।

/১২

টেক্সাস উইন্টার স্টর্ম— মাস দশেক আগের কথা। সেটা ফেব্রুয়ারির মাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং উত্তর মেক্সিকোতে আছড়ে পড়ে শৈত্য ঝড় উরি। আগে থেকেই সতর্ক করেছিল আবহাওয়া দপ্তর। কয়েক লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও এই ঝড়ের সামনে দিশেহারা হয়ে যায় আমেরিকা, কানাডার মতো দেশ। সবমিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কমপক্ষে ১৭ কোটি মানুষ। প্রাণ হারান ২১০ জন। রিপোর্ট অনুযায়ী ৫ দিনের এই তাণ্ডব ২৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিসাধন করে তিনটি দেশে।

/১২

অস্ট্রেলিয়ার বন্যা— ঠিক তার পরের মাসেই ভয়াবহ বন্যার শিকার হয় অস্ট্রেলিয়া। প্রাণ গিয়েছিল মাত্র ২ ব্যক্তির। কিন্তু তা দিয়ে এই বন্যার বীভৎসতা বিচার করা ভুল হবে খানিক। ২ সপ্তাহের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ঘরছাড়া হয়েছিলেন ১৮ হাজার মানুষ। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ২.১ বিলিয়ন ডলারের। পাশাপাশি বিপর্যস্ত হয়েছিল স্বাভাবিক জনজীবন। মারা গিয়েছিল বহু বন্যপ্রাণী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিরেখার অবস্থান বদল ঘটছে দ্রুত গতিতে, তা-ই যেন প্রমাণ করে দেয় এই বন্যা।

/১২

ফ্রেঞ্চ কোল্ড ওয়েভ— ফ্রান্সে সাধারণত মে মাসের মাঝামাঝি সময়েই বিদায় নেয় শীত। গোটা দেশকে ছেয়ে ফেলে বসন্তের রং। এপ্রিল মাস সেটা। ভরা বসন্তের মাঝে হঠাৎ করেই হানা দেয় শীত। ঘন তুষারপাতে ঢেকে যায় ফ্রান্সের বিশেষ কিছু অঞ্চল। চলে একটানা শৈত্যপ্রবাহ। না, কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। আকস্মিক শীতের দাপটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় চাষাবাদে। সবমিলিয়ে ক্ষতির মাত্রা ছাড়িয়েছিল ৫.৬ বিলিয়ন ডলার।

/১২

সাইক্লোন টুকটাই— প্রতি বছরই মে মাসে ভারতীয় উপকূলে হানা দেয় কোনো না কোনো সাইক্লোন। গত ১৪ মে আরব সাগরের ওপরে প্রথমে তৈরি হয়েছিল এমনই একটি ঘূর্ণাবর্ত। যা ক্রমে শক্তিশালী হয়ে রূপ নেয় এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনের। টুকটাই নামাঙ্কিত এই সাইক্লোনের প্রভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল গুজরাট, মহারাষ্ট্র-সহ ভারতের পশ্চিম উপকূল। প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৯৮ জন। বাসস্থান হারান ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিসাধন করে এই ট্রপিকাল সাইক্লোন।

/১২

সাইক্লোন ইয়াস— পশ্চিম উপকূলে যখন ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে টুকটাই, তখন বঙ্গোপসাগরের বুকে জন্ম নেয় আরও একটি ঘূর্ণিঝড়। সাইক্লোন ইয়াস। ২৫ মে তা আছড়ে পড়ে বাংলার উপকূলে। বিপর্যস্ত হয় গোটা দক্ষিণবঙ্গ। প্রভাব পড়েছিল ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডেও। সতর্কতা নেওয়ার পরেও প্রাণ হারান ১৯ জন। তবে ঝড়ের থেকেও ভয়ঙ্কর রূপ নেয় ওয়াটার সার্জ বা ঝড় পরবর্তী বন্যার পরিস্থিতি। ঘরছাড়া হন প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সেইসঙ্গে নোনা জল ঢুকে নষ্ট হয়ে যায় চাষের জমি। ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় ৩ বিলিয়ন ডলারের গণ্ডি।

/১২

ইউরোপিয় বন্যা— জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় সেটা। আকাশ ভেঙে পড়ে গোটা পশ্চিম ইউরোপে। কয়েকদিনের একটানা বৃষ্টিতে দু’কূল ছাপিয়ে যায় ইউরোপের প্রায় সমস্ত নদীই। অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ব্রিটেন-সহ উন্নত রাষ্ট্রগুলিও যেন বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল প্রকৃতির। ইউরোপের সর্বকালীন ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলেও চিহ্নিত করা হয়েছিল এই বন্যাকে। প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৪০ জন। ৪৩ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ভেসেছিল এই ভয়াবহ বন্যায়।

/১২

হেনান বন্যা— ইউরোপের মতোই ওই একই সময়ে বৃষ্টির দাপটে বন্যার শিকার হয় চিনও। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও খুব একটা কম ছিল না। ১৭.৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ধুয়ে যায় হেনান বন্যায়। বাস্তুহারা হন প্রায় ১০ লক্ষের বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যা ছাড়ায় ৩০০-র মাত্রা। যদিও চিনের সরকারি রিপোর্টকে অস্বীকার করেছিল বহু আন্তর্জাতিক সংস্থাই।

/১২

টাইফুন ইন-ফা— জুলাইয়ের শেষ লগ্নে ফিলিপাইনে হানা দেয় ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ইন-ফা। মূলত ফিলিপাইনেই আছড়ে পড়েছিল এই টাইফুন। তারপর ক্রমশ সে এগিয়ে যায় জাপান ও চিনে। সেখানেও তাণ্ডব চালায় বিধ্বংসী টাইফুনটি। গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার। সেইসঙ্গে ঘূর্ণাবর্তের ব্যাপকতার কারণে ভয়াবহ বৃষ্টির শিকার হয় ফিলিপাইন। সেইসঙ্গে স্টর্ম সার্জ ধুয়ে মুছে দেয় উপকূলবর্তী অঞ্চল। বাসস্থান হারিয়েছিলেন ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষ। হিসেবের খাতায়, ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২ বিলিয়ন ডলার।

১০/১২

হারিকেন ইডা— এই দশকের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম ঘূর্ণিঝড়গুলির তালিকায় শীর্ষেই নাম থাকবে ইডার। ইডার ২৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগের সামনে তাসের ঘরের মতো ধ্বসে পড়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, মিসিসিপি, ভার্জিনিয়া-সহ একাধিক রাজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ইডার প্রভাবে। তৈরি হয় বন্যা পরিস্থিতি। বেশ কয়েকদিন ছিল না বিদ্যুৎ সংযোগও। ক্যাটাগরি-৪ এই হারিকেন সব মিলিয়ে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিসাধন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রাণ কেড়ে নেয় ৯৫ জন মানুষের।

১১/১২

ব্রিটিশ কলোম্বিয়ান বন্যা— এই দুর্যোগের পিছনেও প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৃষ্টিরেখার অবস্থান বদলের। নিম্নচাপের কারণে একটানা অতিভারি বৃষ্টিপাতের শিকার হয় ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা, ব্রিটিশ কলোম্বিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তৈরি হয় বন্যা পরিস্থিতি। প্রাণহানির ঘটনা তেমন একটা না হলেও ৭.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয় এই বন্যার কারণে।

১২/১২

এছাড়াও গোটা বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে তাণ্ডব চালিয়ে একাধিক সাইক্লোন। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতেও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের একাংশ। তাছাড়াও ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি বিগত এক বছরে একাধিকবার বিপর্যস্ত হয়েছে বন্যার কারণে। সবমিলিয়ে এই তালিকা যেন শেষ হওয়ার নয়। প্রকৃতির এই রোষের পিছনে যে মানব সভ্যতারই অদৃশ্য হাত রয়েছে, তা এক প্রকার স্পষ্টই। কিন্তু কবে টনক নড়বে রাষ্ট্রনেতাদের? জানা নেই উত্তর…

Powered by Froala Editor