পোষ্য পাচারের জেরে সংকটে ভারতের সবচেয়ে ‘সুন্দর’ কচ্ছপ

হাতে ঝোলানো সাধারণ শপিং ব্যাগ। বাইরে থেকে বেশ বোঝা যায় তার মধ্যে রয়েছে একটা বড়ো বাক্স। জুতো কিংবা দামি জামা-কাপড়ের বাক্স যেমন হয়, তেমনটাই। তবে এ-বাক্সে তেমন কিছুই নেই। রয়েছে জীবন্ত প্রাণ। এই ধরনের বাক্স বা স্যুটকেসে করেই চোখের সামনে দিয়ে প্রকাশ্যে পাচার চলছে ভারতের সবচেয়ে সুন্দরতম কচ্ছপের (Most Beautiful Tortoise Of India)। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। 

ইন্ডিয়ান স্টার টরটয়েস (Star Tortoise)। নাম থেকেই বেশ বোঝা যায় এদের দেহের গড়ন। পিঠের খোলসের ওপর হলুদ তারার মতো নকশাই এই নামের কারণ। শুধুমাত্র ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মাত্র কয়েকটি অঞ্চলে পাওয়া যায় এই বিশেষ কচ্ছপটিকে। সাধারণত শুকনো তৃণভূমি অঞ্চলে বসবাস এই কচ্ছপের। আকর্ষণীয় বর্ণ ও গড়নের জন্য ভারতের সুন্দরতম কচ্ছপ বলেই ধরে নেওয়া হয় এই বিশেষ প্রজাতিটিকে। পাশাপাশি প্রজাতিটি দীর্ঘজীবী এবং তাদের পরিচর্যার খরচ কম হওয়ায়, পোষ্য হিসাবে ক্রমশ তাদের চাহিদা বেড়ে চলেছে গোটা বিশ্বজুড়ে। বিশেষত, ইউরোপ, আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। 

তবে এই কচ্ছপ সরাসরি ইউরোপে পাচার করা হয় না। শ্রীলঙ্কা ঘুরে তা জলপথে পৌঁছায় ইউরোপ কিংবা আমেরিকায়। বর্তমানে পাচারের মাত্রা এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে ক্রমশ বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের তালিকাতে নাম লেখাতে চলেছে ইন্ডিয়ান স্টার টরটয়েস। এমনটাই বলছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট। 

২০১৬ সাল থেকেই এই বিশেষ প্রজাতির কচ্ছপের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল দেশের প্রশাসন। আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও উঠেছিল স্টার টরটয়েসের ব্যবসা বন্ধের দাবি। এর পর ২০১৯ সালে ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টায় আইনত এই কচ্ছপের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বন্ধ করা হয়। তবে তাতে লাভ হয়নি খুব একটা। ২০২০ সালেই দক্ষিণ এশিয়া অবৈধ পাচারের মোট ১১টি ঘটনা লক্ষ করা গেছে। আটক করা হয়েছে প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি কচ্ছপ। যেগুলি পাচার হচ্ছিল ভারত থেকেই। 

আরও পড়ুন
এক শতাব্দী আগে বিলুপ্ত কচ্ছপের প্রজাতি এখনও লুকিয়ে গ্যালাপাগোসের অরণ্যে

কিন্তু আইনি ব্যবস্থা এবং এত তৎপরতার পরেও কীভাবে স্বমহিমায় ঘটে চলেছে পাচারের ঘটনা? গবেষকদের অনুমান, মৎস্যজীবীদের ট্রলারের সাহায্যেই পাচার চলে এই কচ্ছপের। ফলে, অধিকাংশ সময়েই বন আধিকারিকদের সন্দেহের চোখ এড়িয়ে চলে যায় পাচারকারীরা। সেইসঙ্গে বিমানবন্দরে মাদক দ্রব্য, বোমা কিংবা গোলা-বারুদ সংক্রান্ত নিরাপত্তার জন্য বিশেষভাবে জেরা হলেও, বন্যপ্রাণী পাচারের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি তুলনামূলকভাবে অনেকটাই শিথিল। আর সেই কারণেই ক্রমশ বেড়ে চলেছে পাচারের পরিমাণ। অন্যদিকে দীর্ঘজীবী হলেও এই কচ্ছপের প্রজননের হার অত্যন্ত ধীর। ফলে, ক্রমশ দ্রুত হারে কমছে স্টার টরটয়েসের সংখ্যা। এই প্রজাতির অবলুপ্তি আটকাতে গেলে জেলা স্তর থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে অভিমত ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ‘সামান্য’ কচ্ছপের জন্য কি আদৌ সেই ব্যবস্থা নেবে? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেখানেই…

আরও পড়ুন
লিটল আন্দামানে পর্যটন শিল্পে ‘উন্নয়ন’, বিপন্ন বৃহত্তম কচ্ছপ প্রজাতি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আমাজনে কচ্ছপের সুনামি, ভাইরাল ৯২ হাজার সদ্যোজাত কচ্ছপের নদীতে নামার ভিডিও

Latest News See More