সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে লকডাউন। আর সে-কারণেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি। প্রাণীরা পেয়েছে অবাধ বিচরণক্ষেত্র। তবে সবক্ষেত্রে এই ছবি এক নয়। এই পরিস্থিতির মধ্যেই চলছে দেদার বাদুড় হত্যা। বাদুড়ের থেকেই ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। এই গুজবেই সম্প্রতি রাজস্থানের চারটি জেলায় হত্যা করা হয়েছে ‘ফ্রুট ব্যাট’ প্রজাতির অসংখ্য বাদুড়।
চুরু, সিকার, ঝুনঝুনু এবং নগৌর এই চার জেলায় বাদুড় হত্যায় সহায়তা করেছেন বন দফতরের কর্মীরাও। গত কয়েকদিনে শুধু ঝুনঝুনুতেই হত্যা করা হয়েছে ১৫০-এর বেশি বাদুড়। সারা রাজস্থানে মোট সংখ্যা প্রায় কয়েকশো। এমনটাই জানাচ্ছেন রাজস্থানের পরিবেশবিদ দাউ লাল বোহরার।
বোহরা জানান, বাদুড় হত্যার পিছনে দুটি কারণ উঠে আসছে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে। প্রথমত, বাদুড়ই কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে। এই ভ্রান্ত ধারণার শিকার তাঁরা। দ্বিতীয়ত, গ্রামবাসীদের বিশ্বাস বাদুড় বাড়ির পক্ষে অশুভ। তাই জনবসতির নিকটবর্তী সৌধ এবং হাভেলিগুলিতে মেরে ফেলা হচ্ছে বাদুড়। যা দীর্ঘদিন ধরে বাদুড়ের নিরাপদ আবাসস্থল। এর ফলাফল হিসাবে প্রভাব পড়বে পরিবেশে, তারই ইঙ্গিত দিয়েছেন বোহরা।
বাদুড় মানুষের উপকার করে অনেকক্ষেত্রেই। মশাসহ বেশ কিছু ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে পরিবেশের। তাছাড়া পরাগমিলন এবং ফলের বীজ ছড়িয়েও সাহায্য করে বনভূমির বৃদ্ধিতে। ফলে কৃষিকাজেও প্রভাব পড়তে পারে এই প্রাণীদের অনুপস্থিতির।
চিফ ওয়াল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন অরিন্দম তোমার বুধবার ঘোষণা করেন, বাদুড় হত্যা করলে কঠোর শাস্তি হবে অপরাধীদের। ১৯৭২ ওয়াল্ডলাইফ অ্যাক্টের পঞ্চম শিডিউল অনুযায়ী প্রকাশ করা হয় নির্দেশিকা। রাজস্থানের ওই গ্রামগুলিতে অধিবাসীদের সতর্ক করা হবে, এই ব্যাপারে আশ্বাস দেন তিনি।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছিল, করোনার অন্যতম বাহক বাদুড়। কিন্তু সেই করোনাভাইরাসের সঙ্গে কোভিড-১৯ অর্থাৎ সার্স-২ করোনাভাইরাসের একটি মূল পার্থক্য আছে। এই ভাইরাস বাদুড় থেকে সংক্রমিত হয় না অন্যান্য প্রাণীর দেহে। বাদুড়ের শরীরে থাকা করোনাভাইরাস যে কোনো রোগের কারণ হতে পারে, প্রমাণ নেই তারও। বরং কোভিড১৯-এর বিপরীত সংক্রমণ হতে পারে মানুষের থেকে পোষ্যদের, এমনকি বাদুড়ের শরীরেও। এমনটা উঠে এসেছিল গবেষণায়। সুতরাং এই বাদুড় নিধন পুরোপুরিই ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক। গবেষণার তথ্যের ভুল অর্থই পৌঁছেছে মানুষের কাছে। আর এই ভুয়ো তথ্য দ্রুত ছড়িয়েছে স্যোশাল মিডিয়ায়, তা বলার অপেক্ষা থাকে না।
তবে শুধু রাজস্থানে নয়। এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই চলছে গণহারে বাদুড় নিধন। এই নির্মমতার বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন এশিয়ার ৬ দেশের মোট ৬৪ জন গবেষক। তাঁরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, এই প্রজাতির রক্ষার কাজে এগিয়ে আসতে। নাহলে কেবলমাত্র গুজবের জন্যই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে বাদুড়। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে বিপদে পড়তে হবে মানুষকেই…