বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তে শরণার্থীদের ভিড়, কেন এই পরিস্থিতি?

পানীয় জল নেই। খাবার নেই। নেই মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকুও। আসলে ঘন জঙ্গলের মধ্যে জনবসতিই তো নেই কোনো। সেইসঙ্গে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে। এর মধ্যেই জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। এমনই মর্মান্তিক অবস্থা পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে। দ্রুত সাহায্য না পৌঁছে দিলে কিংবা আশ্রয় না দিলে, কয়েকশো শরণার্থীর (Refugee) মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। 

ঘটনার সূত্রপাত হয় সপ্তাহ দুয়েক আগেই। অভিবাসনপ্রত্যাশী হাজার হাজার মানুষকে পর্যটন ভিসা দিয়ে এক কথায় দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল বেলারুশ। অবশ্য তার পিছনে ছিল সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অভিসন্ধি। ২০২০ সালের কথা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঠিক আগে আগেই বিরোধী রাজনৈতিক দলনেতাদের যদৃচ্ছ ধরপাকড় শুরু করেছিল ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী দেশটি। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ৩০-এর বেশি সাধারণ মানুষের, যাঁরা কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সামিল হলেছিলেন। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে পঞ্চমবারের জন্য রাষ্ট্রপতির আসনে বসেছিলেন বেলারুশ প্রধান আলেকজান্ডার লুকেশেঙ্কো।

সেই ঘটনার পরই বেলারুশের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউরোপিয় ইউনিয়ন। তার প্রতিশোধ হিসাবেই বেলারুশের এই পদক্ষেপ। এমনকি মাদকপাচার এবং অভিবাসনের জন্য কোনোরকম ব্যবস্থা নেবে না বেলারুশ, তাও জানিয়ে দিয়েছেন লুকাশেঙ্কো। অন্যদিকে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রকের তরফ থেকেও সম্প্রতি টুইট করে জানিয়ে দেওয়া হয়, বেলারুশ থেকে আগত শরণার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হবে না দেশে। 


আরও পড়ুন
প্রতিবাদী সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করতে বিমান ‘হাইজ্যাক’ বেলারুশের!

তবে শুধু বেলারুশই নয়, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া, আফগানিস্তান, প্যালেস্তাইনেরও বহু শরণার্থী আটকে রয়েছে বেলারুশ-পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী ঘন জঙ্গলে। সংখ্যাটা কমপক্ষে ৬ হাজারের কাছাকাছি তো বটেই। শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই প্রায় ১৫ হাজার বার পোলিশ সীমান্ত পারাপারের চেষ্টা করেছে বাস্তুহীনরা। এমনটাই পরিসংখ্যান উঠে আসছে। 

আরও পড়ুন
একইসঙ্গে দশটি তুলি দিয়ে আঁকেন ছবি, বেলারুশের ‘অতিমানবিক’ চিত্রশিল্পীর গল্প

অন্যদিকে শরণার্থী প্রবেশ আটকে ক্রমশ দুই প্রতিবেশী দেশই বাড়িয়ে চলেছে সেনাসংখ্যা। পোল্যান্ডের সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় ৩ কিলোমিটার অঞ্চলে এনজিও, চিকিৎসাকর্মী এবং সাংবাদিকদের অনুপ্রবেশও বন্ধ করে দিয়েছে পোলিশ সরকার। যার ফলে, খাদ্য-পানীয় থেকে শুরু করে ন্যূনতম সাহায্যটুকুও পাচ্ছেন না আটকে থাকা শরণার্থীরা। ইতিমধ্যেই অনাহারে এবং দুই দেশের সেনাবাহিনীর প্রহারে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন মানুষ। পরিস্থিতি না বদলালে, প্রশাসন নমনীয় না হলে সংখ্যাটা যে আরও বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। 

আরও পড়ুন
৩০ বছর আগে প্রয়াত শিল্পীর গানেই স্বৈরাচার থেকে মুক্তির স্বপ্ন বুনছে বেলারুশ

তবে এই পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়েননি মানবাধিকার কমিশনগুলি। বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ অবস্থান নিয়েছেন পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী ওয়ারশ’ শহরে। কিন্তু সেই আওয়াজ প্রশাসনের কান পর্যন্ত পৌঁছাবে কিনা জানা নেই কারোরই…

Powered by Froala Editor