ভাবা হচ্ছিল মানুষ ছাড়া, অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে না কোভিড-১৯। কিন্তু দু-তিন সপ্তাহ আগেই নিউ ইয়র্কের ব্রোনক্স চিড়িয়াখানায় করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছিল একটি বাঘ ‘নাদিয়া’র শরীরে। তবে সম্প্রতি আরো বেশ কয়েকটি বাঘ এবং সিংহের মধ্যে দেখা যাচ্ছিল লক্ষ্মণ। তাদের কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা করানো হয়। তাতে ৪টি বাঘ ও ৩টি সিংহ মিলিয়ে, আরো ৭টি পশুর করোনা ভাইরাসের রিপোর্ট পজিটিভ এল।
গত মার্চের ১৬ তারিখ থেকেই বন্ধ চিড়িয়াখানা। কিন্তু লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরেও, চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ এই বন্যপ্রাণীগুলির কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে চায়নি। কারণ নমুনা সংগ্রহের জন্য দরকার পড়ে সিডেটিভের, যা শারীরিক ক্ষতি করতে পারে এই মাংসাশীদের। কিন্তু পরে সরকারের চাপে বাধ্য হয়েই পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু কবে টেস্টগুলি করানো হল? কবেই বা রিপোর্ট এল তার? চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষের থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি সে ব্যাপারে।
আশঙ্কার ব্যাপার, বন্যপ্রাণীদের পাশাপাশি গৃহপালিত পোষ্যের দেহেও সংক্রমণ হচ্ছে ভাইরাসের। যা চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। নিউ ইয়র্ক ছাড়াও বেলজিয়ামে বেশ কয়েকটি পোষ্য বিড়ালের দেহে মিলেছে ভাইরাসের অস্তিত্ব। তাছাড়া হংকং-এ জার্মান শেফার্ড এবং পমেরানিয়ান প্রজাতির দুটি কুকুরও আক্রান্ত হয়েছে কোভিড-১৯এ। বিশেষজ্ঞরা নতুন নির্দেশিকা জারি করেছেন এই ঘটনার পরেই। যথাসম্ভব বাড়িতেই রাখতে বলেছে পোষ্যদের।
ব্রোনক্স চিড়িয়াখানার এই ঘটনায় স্পষ্ট মানুষের থেকে সংক্রমণ হচ্ছে প্রাণীদের শরীরে। কিন্তু ঠিক এর উল্টোটাও সত্যি কিনা জানা যায়নি এখনও। পর্যাপ্ত প্রমাণ মেলেনি তার। বিশেষজ্ঞরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মনে করা হচ্ছে বন্যপ্রাণীদের মধ্যে বাঘ এবং সিংহ সহজেই আক্রান্ত হচ্ছে ভাইরাসে। অন্যান্য বিড়াল পরিবারের সদস্য যেমন চিতা, পিউমা, লেপার্ড, শ্বেত চিতার শরীর সংক্রমণের হদিশ মেলেনি কোনো। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছে চিড়িয়াখানাটিকে। বানর প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে মানুষের থেকে সংক্রমণ ঘটে শ্বাসরোগের। তাই সহজে ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এরা। তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে চিকিৎসা চলছে নাদিয়া সহ আরো সাতটি ক্যানাইন পরিবারের সদস্যের। দ্রুত সেরে উঠবে তারা, আশা করছেন প্রাণীবিদরা। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ জু এন্ড অ্যাকোরিয়াম আরও ২০০টি চিড়িয়াখানায় সতর্কতা জারি করেছে। নির্দেশ দিয়েছে অবিলম্বে পশুদের পরীক্ষা করানোর। তবে পশুদের সংস্পর্শে যাওয়ার সময় মাস্ক, গগলস এবং অন্যান্য সুরক্ষা পোশাকের ব্যবহার সুনিশ্চিত করেছে ওই সংস্থা। কমপক্ষে ছ’ফুটের দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। মানুষের শরীর থেকে সংক্রমণ আটকাতে পারলে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবে বন্যপ্রাণীরা। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।