শুধু মহাকাশের অজানা রহস্যের অনুসন্ধানই নয়, বর্তমানে মহাকাশযাত্রার আরও একটি দিক ক্রমশ ফুটে উঠছে। আর কিছু নয়, এই বিষাক্ত পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও যদি মানুষের বসতি গড়ে তোলা যায়! তবে তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন অক্সিজেন (Oxygen)। আর পৃথিবীর বাইরে এই একটি জিনিসেরই বিশেষ অভাব। তবে একটা কথা প্রায় বলাই হয় না, আমাদের উপগ্রহ চাঁদের (Moon) বুকেই কিন্তু রয়েছে অক্সিজেনের বিরাট সম্ভার। আর সেই অক্সিজেনে অন্তত ৮০০ কোটি মানুষের ১ লক্ষ বছর চলে যাবে। তবে এই অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু সমস্যা আছে। আর সেই সমস্যার সমাধানের রাস্তা খুঁজতেই এবার জোট বেঁধেছে নাসা এবং অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সি।
নাসার আর্টেমিস অভিযানের একটি ধাপে অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সির তৈরি একটি রোভার পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত মাসেই এই নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে দুই সংস্থার মধ্যে। তবে সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। চাঁদের বায়ুমণ্ডলে যে অক্সিজেন নেই, এ-কথা তো সকলেরই জানা। সেখানে মূলত হাইড্রোজেন রয়েছে। আর আছে আর্গন, ক্রিপ্টন, জেননের মতো কিছু গ্যাস। তবে গ্যাসীয় অবস্থায় না থাকলেও বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন রয়েছে চাঁদে। আর তা রয়েছে চাঁদের পাথরে বিভিন্ন ধাতুর সঙ্গে যৌগবদ্ধ অবস্থায়। চাঁদের পাথর এবং ধুলোর মূল উপাদানই হল অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকা এবং ম্যাগনেশিয়ামের বিভিন্ন অক্সাইড। ঠিক পৃথিবীর মাটিতেও যেমন দেখা যায়। তবে আমাদের এই অক্সিজেনের জন্য নির্ভর করতে হয় না।
খনি থেকে অ্যালুমিনিয়ামের অক্সাইড তোলার পর ইলেক্ট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশন করা হয়। এই সময় গ্যাসীয় অক্সিজেন বেরিয়ে আসে। তবে আমাদের কাছে এতদিন অ্যালুমিনিয়ামই ছিল মূল পদার্থ। অক্সিজেন ছিল বাই-প্রোডাক্ট। চাঁদের মাটিতে বিষয়টা উলটে যেতে পারে। তবে একটি সমস্যা থেকেই যায়। ইলেক্ট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন। নানা ধরনের ভারী যন্ত্রপাতিরও প্রয়োজন। চাঁদের বুকে সেইসব যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া একটি সমস্যা। তার চেয়েও বড়ো সমস্যা, এই অক্সিজেনকে ধরে রাখার মতো অভিকর্ষ শক্তি চাঁদের নেই। আর সবসময় মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ানো তো সম্ভব নয়। তবে আজকের রকেট সায়েন্সের যুগে এসব নেহাৎই মামুলি সমস্যা। অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সি আর নাসার যৌথ চেষ্টায় এবার তার সমাধান হয় কিনা, সেটাই দেখার।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
চাঁদের মতো বিশালাকার গহ্বর তৈরি হচ্ছে পৃথিবীতে, উদ্বিগ্ন গবেষকরা