“নদী, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছো?”
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’-র কথাই হচ্ছে। এই প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে নদী জানিয়েছিল ‘মহাদেবের জটা হইতে’ জন্ম তার। কিন্তু নদীর উত্তর যদি হয়, ‘গাছ থেকে’? অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। তবে মন্টেনেগ্রোয় গেলে দেখা মিলবে এমনই অদ্ভুত দৃশ্যের।
সাবেক সোভিয়েত অঙ্গরাজ্যটির রাজধানী পডগরসিয়া থেকে মাত্র মাইল পাঁচেকের দূরে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম ডিনোসা। সেখানেই রয়েছে এমন বিস্ময়-বৃক্ষ। যার বুক থেকেই জন্ম নেয় জলের ধারা। পূর্ণাঙ্গ নদী না হলেও, চোখ বন্ধ করে এই জলধারাকে ঝর্না বলাই যায়। কিন্তু গাছ থেকে এভাবে ঝর্না সৃষ্টির কারণ কী?
আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগের কথা। প্রথমবারের জন্য দেখা গিয়েছিল ডিনোসার এই শুকিয়ে যাওয়া মালবেরি গাছ থেকে জলের ধারা নেমে আসার দৃশ্য। স্থানীয়দের বিশ্বাস এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ কিংবা কোনো অলৌকিক শক্তি। তবে ব্যাপারটা আদৌ তেমন নয়। শীতের শেষে বরফ গলার পর কিংবা বৃষ্টির সময় হঠাৎ করেই বেড়ে যায় ভূগর্ভস্থ জলের তল। ভূতলে কোনো ছিদ্রপথ পেলে মাটির চাপে সেই জল উঠে আসে উপরের দিকে।
এই একই ঘটনা ঘটে দেড়শো বছরের পুরনো মৃত মালবেরি গাছটির ক্ষেত্রেও। সময়ের আবহে ক্রমশ ফাঁপা হয়ে গেছে শুকিয়ে যাওয়া গাছটির কাণ্ড। মাটির চাপে এই ফাঁপা কাণ্ডের মধ্যে দিয়েই প্রবাহিত হয় জলের ধারা। তারপর মাটি থেকে দেড় মিটার উঁচুতে অবস্থিত কোটর দিয়ে তা ঝরে পড়ে ঝর্না হয়ে। তবে সারাবছর দেখতে পাওয়া যায় না এই দৃশ্য। প্রতিবছর শীতের ঠিক শেষে এবং বসন্তের শুরুতে দিন দুয়েক দেখা মেলে এই অদ্ভুত ঘটনার।
ইতিমধ্যেই এই গাছটির সৌজন্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে মন্টেনেগ্রোর ডিনোসা গ্রাম। শীতের শেষে এই দৃশ্য চাক্ষুষ করতে ভিড় জমান হাজার হাজার পর্যটক, সাংবাদিক। তাতে বদল এসেছে গ্রামের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও।
বছর কয়েক আগে ভারতের ছত্তিশগড়ের গরিয়াবন্দ জেলায় এবং মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়াতেও দেখা গিয়েছিল এমনই এক দৃশ্য। অবশ্য দুটি ক্ষেত্রেই গাছের গা বেয়ে নেমে আসা জলপ্রবাহ ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। সেই ধারাকে জলপ্রপাত বলা যায় না কোনোভাবেই। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মন্টেনেগ্রোর এই গাছই বিশ্বের একমাত্র গাছ, যা জন্ম দেয় ‘নদী’-র…
Powered by Froala Editor